ঋতুস্রাবে কী ধরনের সমস্যা হয়?
মেয়েদের বিভিন্ন বয়সে ঋতুস্রাবের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৫৭৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. হাসিনা আফরোজ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রী বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : মেয়েদের সাধারণত কোন কোন বয়সে ঋতুস্রাবের সমস্যা আপনারা পেয়ে থাকেন?
উত্তর : এটা বিভিন্ন বয়সে হয়ে থাকে। সাধারণত ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সের মধ্যে মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হয়। একে বলে মেনারকি। এটা অনেক সময় অনেকের আগেই হয়ে যেতে পারে। আট বছর বয়সেও হতে পারে। অনেকের নয় বছর বয়সে হতে পারে। দেখা যায়, মেনারকির পরে অনেক রক্তচাপ হতে পারে। এতটুকু বাচ্চার রক্তপাত হচ্ছে, তখন তারা চিকিৎসকের কাছে যায়। অনেকে আবার গায়েও লাগায় না। ভাবে এটা তো হতে পারে। অনেক সময় হয়তো রক্তস্বল্পতা নিয়ে আসে। তখন সেই মেয়েকে হয়তো হাসপাতালে ভর্তি করে রক্ত দিতে হয়। বয়োসন্ধিকালে পিউবারটি মেনোরিয়া হয়। মাকেও এই বিষয়ে কিছু জানতে হবে। পিটুইটারি অভারিয়ান এক্সিসিস একটা আছে, এর ওপর হরমোন কাজ করে, কাজ করে তার ঋতুস্রাবটা হয়। এটি যখন নতুন শুরু হয়।
বৃদ্ধির যে বিষয়টি এটি কিন্তু পুরোপুরি বৃদ্ধি হতে একটু সময় লাগে। হরমোনের আধিক্য দেখা দিলে, ইসট্রোজেন, প্রোজেসটেরনের সমস্যা দেখা দিলে এটা হতে পারে। কাজেই তাকে আমরা আশ্বাস দিতে পারি, চক্রাকারে দু-তিন মাস দিয়ে দেখতে পারি। এতে ঋতুস্রাবটা নিয়মিত হয়। কিছু কিছু আয়রন ভিটামিন দিলাম, ভালো খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম সবকিছু মিলিয়ে তাকে আমরা আশ্বাস দিয়ে তাকে ব্যবস্থাপনা করতে পারি। তবে যেই রোগীগুলো অনেক রক্তস্বল্পতা হয়ে যায়, ভর্তি করে তাকে রক্ত দিতে হয়। এ সময় কিছু কিছু পরীক্ষা অবশ্যই করা উচিত। যেমন থাইরয়েড প্রোফাইলটা করা উচিত। রক্তের সিবিসিটা করা উচিত। প্রাথমিকভাবে তার একটি আল্ট্রাসনোগ্রাম করা উচিত। হয়তো কিছু পাওয়া যায় না। তবে করা উচিত। যদি কিছু না পাওয়া যায় তাহলে ধরে নিতে হবে। তাহলে সহজে চিকিৎসা করে নিরাময় করা যায়।
প্রশ্ন : আর কী কী সমস্যা হয়?
উত্তর : আরেকটি আছে রিপ্রোডাকটিভ পিরিয়ড। ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মেয়েদের এটি হতে পারে। বেশির ভাগ সময় গর্ভজনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। আরেকটি আছে পলিসিসটিক ওভারিয়ার ডিজিজ। তাদের অনেক সময় ঋতুস্রাবের সমস্যা হয়। তারা অনেক মোটা হয়ে যায়। এটাও একটি হরমোনের সমস্যা। আবার সে হয়তো জানেই না তার গর্ভধারণ হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে বা তার মাসে মাসে একটু পিরিয়ড হয়েই যাচ্ছে, হয়েই যাচ্ছে- একে এড়িয়ে গেল। এরপর দেখা যায় কোনো একটি সময় ভারি রক্তপাত হলো। ভারি রক্তপাত হওয়ার পর সে চিকিৎসকের কাছে আসল। কিন্তু বেশি রক্তপাত আমরা কখন বলব, আমরা তো মেপে দেখি না।
প্রশ্ন : ঠিক কখন বুঝতে পারব আমার সমস্যা হচ্ছে?
উত্তর : যখন দেখতে পারবেন, একদিনে দু-তিন ঘণ্টা পরপর প্যাড পরিবর্তন করতে হচ্ছে বা স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে হচ্ছে, ভিজে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি তখন ধরে নিতে হবে তার ঋতুস্রাবটা বেশি হচ্ছে। এটিও একটি সমস্যা। এমন হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। আরো কিছু সমস্যা এ সময় হতে পারে। গর্ভধারণজনিত সমস্যা, ইউট্রাসে সমস্যা, যাকে ফাইব্রোয়েড ইউট্রাস বলে। ইউট্রাসের ভেতর টিউমার হলে হতে পারে। কারো কারো শ্রোণিতে সংক্রমণের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে, তার ঋতুস্রাবে সমস্যা হতে পারে। আবার কারো কারো জন্মনিয়ন্ত্রক পদ্ধতি কপারটি পরার পর অনেক রক্তপাত হতে পারে। সাধারণত হয় না। তবে সংক্রমণ হয়ে এটা অনেক সময় হতে পারে। আর অনেক সময় ৩০ বছর পরে এ রকম জরায়ুতে ক্যানসার, জরায়ুমুখের ক্যানসার, এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার – এ রকম কারণেও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রেও ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়ে আসতে পারে। আবার অ্যাবোরশনের পরও হতে পারে। আবার প্রসবের পরও কিন্তু তার ঋতুস্রাবের একটি সমস্যা হতে পারে। এটাও হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে হতে পারে। প্রসবের পর দেখা যায়, অনেক দিন ধরে তার ঋতুস্রাব হচ্ছে, আর বন্ধ হচ্ছে না। তখন আমাদের পরীক্ষা করে দেখা উচিত, ফুল বা প্লাজেন্টার বীজ প্রসবের পরও রয়ে গেল কি না। এটা সিজারিয়ান বা স্বাভাবিক প্রসব দুটোর ক্ষেত্রেই হতে পারে।