ফ্যাটি লিভার কেন ক্ষতিকর?
বেঁচে থাকার জন্য যে অঙ্গগুলো গুরুত্বপূর্ণ, এর মধ্যে লিভার অন্যতম। লিভারের একটি রোগ হলো ফ্যাটি লিভার। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ফাওয়াজ হোসাইন শুভ। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি ও হেপাটলি বিভাগে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : ফ্যাট বলতে আমরা বুঝি চর্বি জমা হওয়া, মুটিয়ে যাওয়া। ফ্যাটি লিভার মানে কী?
উত্তর : ফ্যাটি লিভার শব্দের অর্থ হচ্ছে লিভারের মধ্যে চর্বি জমা। সাধারণত আমাদের লিভারের মধ্যে পাঁচ ভাগ পর্যন্ত চর্বি থাকতে পারে। লিভারের একটি কাজ হচ্ছে এই চর্বি ও চর্বিজাতীয় খাদ্যতে পরিপাক করা। কিন্তু এই পাঁচ ভাগের বেশি চর্বি যদি লিভারের মধ্যে জমা হয়ে থাকে, তখনই একে আমরা ফ্যাটি লিভার বলে সঙ্গায়িত করে থাকি। আধুনিক বিশ্বে এবং আমাদের দেশেও ফ্যাটি লিভারকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করে থাকি। একটি হলো অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্বে যেহেতু অ্যালকোহল ও ফ্যাটি লিভার এক সঙ্গে জড়িত হয়ে গেছে, তাই একে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার বলা হচ্ছে।
আরেকটি আসছে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। অর্থাৎ অ্যালকোহল না খেয়ে ফ্যাটি লিভার। যেটা আমাদের দেশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রচলিত।
প্রশ্ন : একজন মানুষের ফ্যাটি লিভার হলে সমস্যা কী? আমাদের শরীরেও চর্বি জমে। আমরা জানি যে চর্বি বেশি জমে যাওয়া খারাপ। তারপরও কারো কারো জমে। আর সেটা নিয়েও আমরা তো চলছি। লিভারের বেলায় একে এত গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? লিভারের বেলায় পাঁচ ভাগের বেশি চর্বি জমে গেলে ক্ষতি কী?
উত্তর : দেখুন, এই যে নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের কথা আমি আপনাকে বলেছি। এই নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার থেকে দুটো জিনিস হতে পারে। একটি হলো স্টিয়ারটোসিস, নন অ্যালকোহলিক স্টিয়ারটোসিস। অর্থাৎ লিভারের মধ্যে চর্বি জমা হলো। তবে এর পরের ধাপ যেটা, স্টেয়াটোহেপাটাইটিস। অর্থাৎ চর্বি জমা হলো, তার সঙ্গে লিভারে প্রদাহ হলো। এ রকম হলে কিন্তু লিভারের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। নন অ্যালকোহলিক স্টেয়াটো হেপাটাইটিস থেকে সিরোসিস এবং লিভার ক্যানসার হতে পারে। আমাদের দেশের জন্য কিন্তু এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন কিন্তু অনেক রোগীর এমন হয়ে লিভার সিরোসিসের দিকে যাচ্ছে। একে আমরা নন-বি, নন-সি হেপাটাইটিস বলি।
এসব ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ফ্যাটি লিভার একটি অন্যতম কারণ। অনেক রোগী কিন্তু এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ফ্যাটি লিভারের বিষয়টি কিন্তু হঠাৎ করে রোগীরা টের পায়।
একজন রোগী সনোলজিস্টের কাছে গেলে উনি আলট্রাসনোগ্রাম করলেন। আলট্রাসনোগ্রাম করে ফ্যাটি লিভার পেয়েছেন। ফ্যাটি লিভার হলেই কিন্তু ইদানীং বিশেষজ্ঞরা অবশ্যই লিভার বিশেষজ্ঞের কাছে যান। কেননা ফ্যাটি লিভার যদি থেকে থাকে, তাহলে আমরা তার কারণ জানতে চাই। অর্থাৎ ওনার কোনো অ্যালকোহলিক ইতিহাস আছে কি না, ডায়াবেটিস আছে কি না, থাইরয়েড হরমোনের কোনো সমস্যা আছে কি না, কিংবা ওনার কোনো মাদকাসক্তের ইতিহাস আছে কি না। এই জিনিসগুলো আমরা জানতে চাই। কারণ সি ভাইরাসের সঙ্গে অ্যালকোহলের সঙ্গে, হরমোনের সমস্যার সঙ্গে এই লিভারটি যুক্ত। যদি এই সমস্যা থাকে প্রথমত আমরা সমস্যার সমাধান করি।
এরপর সে ফ্যাটি লিভারের জন্য আমরা কাজ করে থাকি। আর যদি কোনো সমস্যা না থেকে থাকে, তখন আমরা কেবল লিভারকে নিয়ে কাজ করে থাকি। কারণ, ফ্যাটি লিভার হলে সিরোসিস এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে লিভার ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের অবশ্যই এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।