কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে কখন যাবেন?
কোমর ব্যথা একটি প্রচলিত সমস্যা। বিভিন্ন কারণে কোমর ব্যথা হয়। কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৪১৪তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অধ্যাপক আলতাফ হোসেন সরকার। বর্তমানে তিনি পান্থপথ ফিজিওথেরাপি সেন্টারে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রশ্ন : কোন ধরনের কোমর ব্যথায় ফিজিওথেরাপির ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : কোমরের ব্যথা হলেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন : সব ধরনের কোমর ব্যথার জন্যই রোগী ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে পারে?
উত্তর : অবশ্যই।
প্রশ্ন : প্রথমে একটু জানি কোমর ব্যথা আসলে কেন হয়?
উত্তর : কোমরের ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ আছে। অনেক কারণের মধ্যে প্রধান যেগুলো সেগুলো বলব। অনেকক্ষণ বসে কাজ করা, সামনের দিকে ঝুঁকে কাজ করা, সামনের দিকে ঝুঁকে কিছু ওঠানো। অর্থাৎ বসা অবস্থায় ডান দিক থেকে কিছু নেওয়া, বাম দিক থেকে কিছু নেওয়া। এখানেই বেশি রোগী অভিযোগ করেন যে, এ রকম অবস্থাতেই কোমরের ব্যথা আমি পেয়েছি। যেমন : অনেকে বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠেছি, কাপড় পড়তে গিয়ে, প্যান্ট পরতে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেলাম’। আবার অনেকে বলেন, ‘ওয়াশ বেসিনে ব্রাশ করতে গিয়ে আমি কোমরে ব্যথা পেলাম’। এখানে একটি বিষয় বলে রাখি, আমাদের দেশের ওয়াশ বেসিনগুলো ওভাবে মেডিকেটভাবে লাগানো নয়। অর্থাৎ একেকজনের উচ্চতা অনুযায়ী একেক রকম ওয়াশ বেসিন হওয়ার কথা। কিন্তু ওয়াশ বেসিন একই লেভেলে লাগানো থাকে। যিনি লম্বা তার জন্যও যেমন, যিনি একটু খাটো তার জন্যও তেমন। অনেক সময় যিনি লম্বা তাকে বাঁকা হয়ে ব্রাশ করতে হয়। সোজা হতে গিয়ে কোমর ব্যথা হয়।
অথবা কখনো ভারী জিনিস তুলতে গিয়েও কোমর ব্যথা হয়। বাচ্চাকে নিচ থেকে তুলতে গিয়ে কোমর ব্যথা হয়। কোমর যদি সব সময় গর্ত করে রাখেন তাহলে কখনোই কোমর ব্যথা হবে না। কিন্তু আমরা সব সময়ই সামনে ঝুঁকে থাকি। অর্থাৎ গর্তটা থাকে না। কোমরটা সামনের দিকে ঝুঁকে আসছে। যার জন্য কোমর ব্যথা হয়। কারণ আমাকে তৈরি করা হয়েছে একভাবে। আমি তার উল্টো নিদের্শনায় কাজ করি। কোমর ব্যথা তো হবেই।
এ ছাড়া বিভিন্ন অসুস্থতা যেমন : ভেতরে স্পোনডোলোসিস হয়, স্পোনডোলাইটিস হয়, স্পোনডিলোলিসথোসিস হয়, ডিজেনারেশন হয়, ডিস্কে সমস্যা হয়। এসব কারণে কোমর ব্যথা হয়ে থাকে। কিন্তু মেকানিক্যাল কোমর ব্যথা যেটা, আমি একটু আগে যেটা বলেছি, এটার অবস্থান বেশি। ১০০ ভাগ লোকের মধ্যে ৭০ ভাগ লোকেই মেকানিক্যাল কোমর ব্যথায় ভোগেন। এ ছাড়া এক প্রকার কোমর ব্যথা হয়, আমাদের দেশে খুব প্রচলিত, গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এটা হয়। প্রতিটি গর্ভবতী নারীর কোমর ব্যথা হবেই।
প্রশ্ন : ঠিক কোন সময়ে ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হয়?
উত্তর : কোমর ব্যথা হলেই আপনি ফিজিওথেরাপিস্টের সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ফিজিওথেরাপিস্ট তার ধারণা অনুযায়ী, তার চিকিৎসার পদ্ধতি তৈরি করবেন।
আমি ফিজিক্যাল ধারণার ওপর বেশি গুরুত্ব দিই। আমি ফিজিক্যাল ধারণা করে বের করব যে কী কারণে আপনার ব্যথা হচ্ছে? যেমন শুধু যদি আটসাট পেশির জন্য আপনার ব্যথা হয়, দেখা যাচ্ছে পেশির দুর্বলতার জন্য হচ্ছে। তখন পেশির শক্তি বাড়িয়ে দেব। অর্থাৎ পেলভিস যে হাড় থাকে অনেক সময়ই দেখা যায়, একদিকে উঁচু হয়, একদিকে নিচু হয়ে যায়, এর কারণে ব্যথা হয়। তাই উঁচু ও নিচুকে সমান করে দুটো লেভেল যদি করে দিই এবং পেশিকে শক্তিশালী করে দিই তাহলে আপনার ব্যথা চলে যাবে। অনেক সময় আমরা এক্সরেতে দেখি মাসেসল স্পাজম। আসলে এটি পেশির দুর্বলতা। অর্থাৎ ওখানে লোডোরি কার্ভ ধরে রাখার জন্য যে পেশিগুলো কাজ করে তারা দুর্বল। তার মধ্যে একটি হলো সোয়াচ মাসেল। সে অন্য পেশির সঙ্গে কার্ভকে ঠিক রাখে। সে দুর্বল। এখানে সোয়াচের চিকিৎসা করে দেব। একটি পরীক্ষা রয়েছে সোয়াচ টেস্ট। সোয়াচ টেস্ট করতে এক সেকেন্ড লাগে। করলেই দেখা যাবে পেশিগুলো দুর্বল। এগুলোর চিকিৎসা করলে কোমর ব্যথা ভালো হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : এই চিকিৎসার সুযোগগুলো কী রকম?
উত্তর : চিকিৎসার সুযোগ তো এখন আমাদের দেশে খুবই ভালো। এখন ঢাকার বাইরে অনেকেই ফিজিওথেরাপি প্র্যাকটিস করে। আমাদের ফিজিওথেরাপিস্ট যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা দেশে ও বিদেশে অনেক পড়াশোনা করে এসে চিকিৎসা করছেন। রোগীদের অনেক উপকার হচ্ছে।
প্রশ্ন : ফিজিওথেরাপির যে মাত্রাগুলো সেগুলো যদি যথাযথ না হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে?
উত্তর : বেড়ে যাবে। ফিজিওথেরাপির চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগী তাৎক্ষণিক বলবে আমার একটু আগে ব্যথা ছিল, এখন ভালো আছি। আর এক সপ্তাহের মধ্যে রোগী বলবে আমি ভালো বোধ করছি। যদি রোগী বলে আমি ভালো বোধ করছি না, তাহলে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে না। সেখানে চিকিৎসা পদ্ধতি যেভাবে যাচ্ছে তার পরিবর্তন করে ফেলব। দুটো জিনিস একটি হলো ফ্ল্যাক্সন ও এক্সটেনশন। আমি ফ্ল্যাক্সন করে যাচ্ছি, তবে রোগীর ব্যথা বেড়ে যাচ্ছে, তাহলে ফ্ল্যাক্সন দরকার নেই তার। আমরা অন্য পদ্ধতিতে চলে যাব। আর আপনি যদি কারণ বের করতে পারেন, ব্যথা কখনোই বাড়বে না। ভালো হয়ে যাবে।