বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস
‘ভালোর জন্য ম্যালেরিয়া বন্ধ হোক’
ম্যালেরিয়া আমাদের দেশে খুব পরিচিত একটি রোগ। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর বিস্বাদ কুইনাইন সেবনের বিষয়টি সাহিত্যেও এসেছে। এক সময় ম্যালেরিয়া আমাদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হলেও এখন কিন্তু তা কেটেছে অনেকটাই। জনগোষ্ঠী সচেতন হয়েছে। দেশে এখন আর বিপুল জনগোষ্ঠী ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয় না। কমেছে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আজ বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ভালোর জন্য ম্যালেরিয়া বন্ধ হোক’।
তারপরও বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়ার ভয়াবহতা কিন্তু কমেনি। ২০১৫ সালে ২১৪ মিলিয়ন লোক ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষ। বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ম্যালেরিয়া ঝুঁকির মধ্যে আছে। ৯৭টি দেশে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ চলছে। তবে আশার কথা হলো, আমাদের দেশের তো বিশ্বব্যাপী এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার হার কমেছে ৬০ ভাগ। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রায় সাত মিলিয়ন জীবন রক্ষা পাচ্ছে।
ম্যালেরিয়া মশাবাহিত রোগ। এটি অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ছড়ায়। সাধারনত স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা মানুষকে কামড়ায়। পুরুষ মশা কিন্তু কামড়ায় না, লতা-পাতার রস খেয়ে জীবনধারণ করে।
বিশ্বব্যাপী ২০ প্রকারের অ্যানোফিলিস মশা আছে। এরা সাধারণত রাতে কামড়ায়। পরিষ্কার পানিতে এরা বংশবিস্তার করে। সাধারণত বর্ষাকালে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ে।
ম্যালেরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ম্যালেরিয়া হলো ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। আক্রান্ত ব্যাক্তির জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, কাশি, ডায়রিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। এদের জন্ডিস, লিভার ও প্লীহা বড় হতে পারে। চিকিৎসা নিতে দেরি করলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন উপসর্গ যেমন খিঁচুনি, প্রলাপবকা দেখা দিতে পারে। এরা দ্রুতই কোমায় গিয়ে মারা যেতে পারে। শিশুরা কোনো ধরনের উপসর্গ প্রকাশ না করেই মারা যেতে পারে। গর্ভবর্তীরা আক্রান্ত হলে অ্যাবরশন হতে পারে। ভাইভ্যাক্স ও ওভালি ম্যালেরিয়ায় জ্বর আসল বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে। জ্বরের শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তি ঠান্ডা অনুভব করেন, এরপর শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। কয়েক ঘণ্টা পর প্রচুর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। ৪৮ ঘণ্টা পর পর জ্বর আসে। এ ক্ষেত্রেও লিভার ও প্লীহা বড় হতে পারে। এ দুটো ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর আবার ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ম্যালেরি ম্যালেরিয়ায় জ্বর তিন দিন পর পর আসে।
এ রোগ নির্ণয় করতে রক্তকাঁচ পরীক্ষা করা যায়। এটি সাধারণত হাসপাতালগুলোতে হয়। বাংলাদেশে মাঠ পর্যায়ে ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি কোন ধরনের ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে তা জানা যায় র্যাপিড ডায়াগনোস্টিক টেস্টের (আরডিটি) মাধ্যমে। এটি খুবই কার্যকর।
মারাত্মক নয় এমন ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় কো-আর্টেম সেবন করতে হয়। মোট ২৪টি ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। প্রথম চারটি ট্যাবলেট সেবনের ৮ ঘণ্টা, ২৪ ঘণ্টা, ৩৬ ঘণ্টা, ৪৮ ঘণ্টা ও ৬০ ঘণ্টা পর আরো চারটি করে ট্যাবলেট সেবন করতে হয়। এ ছাড়া আর্টেসুনেট, ম্যাফলোকুইন, সালফাডক্সিন-পাইরিমিথামিন সেবন করা যায়। মারাত্মক ধরনের ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় ইনজেকশন আকারে আর্টেসুনেট দেওয়া হয়। ভাইভেক্স ও অন্যান্য ম্যালেরিয়ায় তিনদিনের ক্লোরোকুইন ও ১৪ দিনের প্রাইমাকুইন সেবন করতে হয়।
একটি কথা মনে রাখতে হবে, ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হলে দেরি না চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। দেরি করলে কিন্তু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই ম্যালেরিয়া-প্রবণ এলাকার বাসিন্দা বা ওই এলাকায় সম্প্রতি ভ্রমণ করেছেন এমন কারো জ্বর হলে দেরি না চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।