নাক ডাকা থেকে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে
নাক ডাকা সাধারণত তিন ধরনের হয়—হালকা, মধ্যম ও তীব্র। সাধারণত মধ্যম ও তীব্র নাক ডাকা থেকে বিভিন্ন জটিলতা হয়। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮১৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মনিলাল আইচ লিটু। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের নাক কান গলা ও হেড নেক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মধ্যম বা তীব্র নাক ডাকার সমস্যার জটিলতা কী হতে পারে?
উত্তর : স্লিপ এপনিয়া তো একটি রোগ। পশ্চিমা বিশ্বে এর কিন্তু এখন প্রচুর রোগী এবং নিয়মিত চিকিৎসা হচ্ছে। নাক ডাকার জন্য তার রক্তচাপ বেড়ে যায়, স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়, তার অনিয়মিত হার্ট বিট হয়। সড়ক দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ হলো নাক ডাকা। নাক ডাকার কারণে যন্ত্রপাতিজনিত দুর্ঘটনা হয়, নাক ডাকার কারণে তার স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। কর্মক্ষমতা কমে যায়। দেখা যায়, কোনো কাজে তার আগ্রহ থাকে না। এখন বলা হয়, সকালে মাথাব্যথার ৩০ ভাগ কারণ স্লিপ এপনিয়া। কাজেই এর প্রভাব তো মারাত্মক। টাইপ টু ডায়াবেটিসের কারণও এখন স্লিপ এপনিয়া। শিশুদের ক্ষেত্রে এডিনয়েড টনসিলাইটিস হয়, সেই ক্ষেত্রে সমস্যা হয়।
আপনি জানেন, শিশুর শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্য অক্সিজেন প্রয়োজন। নাক ডাকার অর্থ হলো তার শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হচ্ছে। কাজেই তার শারীরিক ও মানসিক গঠনে সমস্যা দেখা দেয়।
প্রশ্ন : যখন আপনাদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে আসে, তখন আপনারা কী ধরনের পরামর্শ দেন রোগীদের?
উত্তর : ইউএসএতে আমি একটি সেন্টারে কাজ করেছি। সেখানে দেখা গেছে, ৯০ ভাগ অপারেশন হচ্ছে স্লিপ এপনিয়ার জন্য। আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এই চিত্র একটু ভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা পদ্ধতিটাও একটু ভিন্ন। প্রথমত, আমরা ভাগ করি, তার কোন গ্রেডে এই সমস্যা রয়েছে। আদৌ এটি তার সমস্যা কি না? এই জন্য পলিসনোগ্রাম একটি মেশিন দিয়ে স্লিপ স্টাডি করা হয়। রোগীকে একটি ঘরে ঘুমাতে দেওয়া হয়। একে বলে একটিগ্রাফি। আমাদের দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে এখন এটি হচ্ছে। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এটি করছেন।
নাক ডাকার সমস্যাকে মাইল্ড, মডারেট, সিভিয়ার কখন বলি, সেটি একটু বুঝে রাখা দরকার। স্লিপ এপনিয়া শব্দটিকে আমরা ব্যাখ্যা করি এভাবে, তার যদি ১০ সেকেন্ডের বেশি নাক দিয়ে কোনোরকম বাতাস না যায়, একে আমরা বলি স্লিপ এপনিয়া। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম কেবল ঘুমালেই হবে না। অর্থাৎ ঘুমটা তার সাউন্ড স্লিপ হবে। ঘুমের বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। এটিতে আমরা না গিয়েও বলতে পারি, সাত ঘণ্টায় মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, যদি ব্যক্তির ৩০ বারের বেশি পুরোপুরি দম বন্ধ হয়ে যায় এবং সেটি যদি ১০ সেকেন্ডের বেশি থাকে, একে আমরা বলি ফুল গ্রোন স্লিপ এপনিয়া। এখন ৩০ বারের যদি বেশি হয়, এটি জটিল বা ম্যালিগনেন্ট। আর ২০ থেকে ৩০ বার হলে সেটি হলো মডারেট। আর ৫ থেকে ১০-কে বলা হয় মাইল্ড স্লিপ এপনিয়া। আর পাঁচের যদি নিচে আসে, সেটার কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। শুধু তাকে আমরা কিছু পরামর্শ দিই। আমরা পরামর্শ দিই তার স্লিপ হাইজিন মেনে চলতে হবে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।