পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ কী?
নারী শরীরে বর্তমানে একটি প্রচলিত সমস্যা পলিসিস্টিক ওভারি। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে ওভারি পলিসিস্টিক হয়ে যায়। এর লক্ষণ কী?
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৭৯৮তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. শারমিন আব্বাসি। বর্তমানে তিনি আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অনিয়মিত ঋতুস্রাব এর একটি লক্ষণ। আর কী কী লক্ষণ রয়েছে?
উত্তর : ঋতুস্রাবের সমস্যা নিয়েই রোগীরা প্রথম আসে। কারণ, পিসিও মানেই হচ্ছে এনড্রোজেন হরমোনটা বেশি। পুরুষের শরীরে যে হরমোন বেশি থাকে, সেটি যখন নারীর শরীরে বেশি হয়, তখন কিন্তু তার যে রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেমের প্রক্রিয়া সেগুলো বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। যখন সেটা বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, তখন যে হিসেবে তার ঋতুস্রাবটা হওয়া দরকার, সেটা হচ্ছে না। আবার যখন হচ্ছে, সেটি পরিমাণে কম হচ্ছে অথবা তার ঋতুস্রাবের যে সময়টা সেটা লম্বা হচ্ছে। সাধারণত আমরা বলি, ২৮ থেকে ৩০ দিন পর পর একজন নারীর ঋতুস্রাব হবে। সেটি না হয়ে ৩৫/৪০/৪৫ দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে হচ্ছে। আবার যখন হচ্ছে, তখন কিন্তু বেশি রক্তপাত নিয়ে আমাদের কাছে চলে আসছে। অনেক সময় দেখা যায়, তলপেটে ব্যথা হচ্ছে। আবার কিছু শারীরিক পরিবর্তন নিয়েও কিন্তু রোগীরা আমাদের কাছে আসে। প্রথমত, স্থূল হয়ে যাওয়া একটি পরিবর্তন। অবাঞ্ছিত কিছু লোম থাকে। আরেকটি বিষয় থাকে, হয়তো তার কখনো এর আগে মুখে ব্রণ হতো না। হঠাৎ করে দেখা গেল তার মুখে ব্রণ ভরে গেছে। সে হয়তো ব্রণের চিকিৎসা করছে। তবে উৎসতে দেখা যাচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি রয়েছে। এখন আমরা আমাদের প্র্যাকটিসে পাই, অনেক রোগীরা মানসিক অসুস্থতা নিয়ে আসে। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা।
বিবাহিত যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে দেখা যায় সাইকোসেক্সুয়াল কিছু ডিজঅর্ডার নিয়ে আসে। বিবাহিত যারা, তাদের যদি বিয়ের পরপরই পিসিও হয়, আর পিসিও যদি নির্ণয় করা না যায়, তাহলে দেখা যায় অনেক দিন ধরে চেষ্টা করছে গর্ভধারণের জন্য, তবে গর্ভধারণ করতে পারছে না। বন্ধ্যত্ব কিন্তু পিসিওর একটি লক্ষণ। এ ধরনের জটিলতা নিয়ে আসতে পারে। আবার পিসিওর যে বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়েও আমাদের কাছে আসতে পারে।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে এসে তারা সাধারণত কী বলে?
উত্তর : তারা অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কথা বলে বা অনেক দিন ধরে গর্ভধারণের চেষ্টা করছে, হচ্ছে না সেটি বলে। ত্বকের পরিবর্তনের কথা বলে। যেই মেয়েটা ফর্সা ছিল, সে হঠাৎ করে হয়তো কালো হয়ে যাচ্ছে। ত্বকের যেসব ভাঁজ থাকে, যেমন—গলার ভাঁজ, ঘাড়ের ভাঁজ, হাতের ভাঁজ; এগুলো হয়তো হঠাৎ করে বেশি কালো হয়ে যাচ্ছে। ব্রণের কথা বললাম। অবাঞ্ছিত লোম নিয়ে আসে অনেকে। অনেকের মনে হচ্ছে, ব্রেস্টের সাইজ কমে যাচ্ছে। এসব অভিযোগ তারা করে।
প্রশ্ন : কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি দেন?
উত্তর : আমরা তাদের তো অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিই। তবে তার আগে তাদের বিএমআইটা সমন্বয় করে নিই। ওজনের কী অবস্থা, সেটি দেখি। সবকিছু দেখার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো অবশ্যই থাকে। এন্ড্রোজেন হরমোন যেহেতু বেড়ে যায়। তাই হরমোনটা আমরা দেখে নিই। এই ক্ষেত্রে অনেকেরই কিন্তু ডায়াবেটিসের কাছাকাছি বা ডায়াবেটিসের দ্বারপ্রান্ত বা কারো কারো ডায়াবেটিস হয়ে গেছে এমন একটি অবস্থায় থাকে। সেই ক্ষেত্রে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা আমাদের জন্য খুব জরুরি। আর শেষে হলো আলট্রাসনোগ্রাফি। যদি বিবাহিত হয়, তাহলে ট্রান্স ভেজাইনাল পদ্ধতিতে করি। আর অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে এবডোমিনালই আলট্রাসনো করে দেখে নিই কী অবস্থা রয়েছে। সাধারণত দেখা যায় যে ওভারিগুলো জুড়ে ১০টা/২০টা বা তার ওপরে সিস্ট থাকছে। এগুলোর একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন থাকে, যেগুলো দেখে আসলেই বোঝা যায় যে সে পলিসিস্টিক ওভারিতে ভুগছে। তখন হরমোন ও ইতিহাস সব ফলাফল নিয়ে সমন্বয় করে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। এর ওপর ভিত্তি করেই চিকিৎসা হয়।