ঘি খেলে কি প্রসবে সুবিধা হয়?
মরিয়ম গ্রামের মেয়ে। দুই বছর হলো বিয়ে হয়েছে। মরিয়ম ও তার স্বামী দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জন্মনিরোধ পরিকল্পনায়। এবার দুজনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সন্তান নেবে। শাশুড়ির পীড়াপীড়িতেই ওরা সন্তান নেওয়ার কথা ভাবছে।
যাই হোক, কয়েক মাস পর মরিয়ম তার স্বামীকে জানল গর্ভধারণের কথা। স্বামী ও তার শাশুড়ি খুশিতে আটখানা। বউয়ের যত্নে শাশুড়ি নতুন করে মনোনিবেশ করেছেন। মরিয়ম স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপে যাচ্ছেন।
মরিয়মের শাশুড়ি পুরোনো দিনের মানুষ। মরিয়মের এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়া তাঁর পছন্দ নয়। দেখতে দেখতে গর্ভধারণের নবম মাস শুরু হয়ে গেছে। শাশুড়ির ব্যস্ততা যেন আরো একধাপ বাড়ল। এত দিন তিনি বউমার গলায় নানা ধরনের তাবিজ ঝুলিয়ে ক্ষান্ত ছিলেন। এবার বউমাকে দুধের সঙ্গে মিলিয়ে ঘি খাওয়ানো শুরু করলেন। প্রতিদিন অন্তত দুবার করে এই ঘি খাওয়া চলছে। মরিয়ম প্রথমে কিছুটা আপত্তি করলেও কোনো লাভ হয়নি। বউমার আপত্তির উত্তরে শাশুড়ির অকাট্য যুক্তি, ঘি খেলে নাকি প্রসবের পথ পিচ্ছিল হয়ে বাচ্চা প্রসবে সুবিধা হবে।
আমাদের দেশে গ্রামে-গঞ্জে, এমনকি শহরেও অনেকে এই শাশুড়ির মতো মনে করেন যে ঘি খেলে নাকি প্রসবের পথ পিচ্ছিল হয়। আসলে এই ধারণা মোটেও ঠিক নয়। কেউ যদি ঘি খেয়ে থাকে, তাহলে সেই ঘি খাওয়ার পর কোনোক্রমেই জরায়ুমুখের সঞ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং ঘি ত্বকের নিচে, অর্থাৎ শরীরে জমা হতে পারে চর্বি হিসেবে। ঘি হজম হয়ে ঘিয়ের মতো গাঠনিক অবস্থানে থাকার কোনো সুযোগ নেই। প্রসবের সময় প্রসবের পথ পিচ্ছিল হওয়ার জন্য প্রাকৃতিকভাবেই সময়মতো এক ধরনের পিচ্ছিল পদার্থ, বাচ্চা যে পাতলা পদার্থ থলিতে থাকে, সেটি ফেটে বেরিয়ে আসে। এ জন্য ঘি খাওয়ার কোনো যুক্তি নেই। কাজেই প্রসবের সুবিধা হওয়ার জন্য অযথা ঘি খাওয়ার দরকার নেই। ঘি খেলে প্রসবের পথ পিচ্ছিল হবে—এমন কথার কোনো ভিত্তি নেই। এ ধরনের ধারণা একেবারেই ভুল।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।