রোজার সময় গর্ভবতী মায়ের খাবার-দাবার
রোজার সময় গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখবেন কি না এ নিয়ে অনেকে দ্বিধায় থাকেন। এ সময় কারা রোজা রাখতে পারবেন আর কারা পারবেন না এ বিষয় নিয়ে ১ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৮৩তম পর্বে কথা বলেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালেন প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস মহল রুনি।
প্রশ্ন : সাধারণভাবে একজন নারী যখন গর্ভবতী হন, তাঁর কিছু পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। একজন গর্ভবতী মায়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : গর্ভধারণ থেকে ডেলিভারির পর দেড় মাস পর্যন্ত একজন মাকে নিয়মিত পরামর্শ ও চেকআপের মধ্যে রাখতে হয়। আমরা চেকআপকে তিন ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথম তিন মাস, পরবর্তী তিন মাস (মানে ছয় মাস), এরপর নয় মাস। সাধারণত যেটা হয়, প্রথম তিন মাসে একজন নারীর যখন গর্ভধারণ হয়েছে, তখন ৫০ শতাংশের লক্ষণ থাকে সে হয়তো বমি করছে, খেতে পারছে না, তার কিছুই ভালো লাগছে না। যেটা খেতে চাচ্ছে তাতে গন্ধ হচ্ছে। পুষ্টি বজায় রাখতে পারছে না। অথবা বারবার সে টয়লেটে যাচ্ছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে দেখা যায়, তাঁর হয়তো প্রস্রাবে ইনফেকশন হয়েছে। সেই সময় মা উপলব্ধি করেন বাচ্চাটা তাঁর পেটের ভেতর নড়তে শুরু করেছে। এটা যদি তাঁর জানা না থাকে, তখন সে বিষয়টিকে ঠিকমতো বুঝে নিতে পারে না। কাজেই এই জিনিসগুলোর চেকআপ করতে হবে।
এরপর তৃতীয় ভাগে, সাত মাস থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত পেটের ভেতরের বাচ্চটা ঠিকমতো বাড়ছে কি না, তাঁর ডায়াবেটিস আছে কি না, তাঁর রক্তক্ষরণের কোনো সমস্যা আছে কি না এগুলো দেখা হয়। এ ধরনের সমস্যা তখন হয়। অথবা দেখা গেল তিনি কোনো চেকআপে ছিলেন না, হঠাৎ করে যখন ডেলিভারিতে গেলেন হুট করে পানি ভেঙে গেল। কিংবা বাচ্চা নামছে না। যেহেতু চেকআপে নাই তাই আমরা বুঝতে পারি না, এটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কি না।
অ্যান্টিনেটাল চেকআপ বা গর্ভকালীন চেকআপ এই কারণে করা দরকার যে এই চেকআপের মাধ্যমে আমরা একটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণকে বের করে আনব।
প্রশ্ন : একজন মা গর্ভধারণের পর কতদিন পরপর তাঁর চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত?
উত্তর : আদর্শগতভাবে প্রথম সাত মাসের প্রতি মাসে একজন মাকে চেকআপে আসতে হবে। তার পরের মাস থেকে নয় মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে তিনি দুবার আসবেন। ১৫ দিন পরপর। এরপর নয় মাসের পর ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে আসবেন।
প্রশ্ন : আপনারা চেকআপের সময় কী দেখে থাকেন?
উত্তর : আমাদের কাছে যখন আসেন, প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই আমরা দেখব তাঁর ওজন কত। উচ্চতা কত, রক্তচাপ ঠিক আছে কি না, ইউরিনে কোনো এলবুমিন আছে কি না, তাঁর কিছু বিশেষ পরীক্ষা করতে হয়। দ্রুত একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়। ১৮ সপ্তাহের দিকে একটা এনোমালি স্কেন করব, বাচ্চার কোনো বৃদ্ধিগত অস্বাভাবিকতা আছে কি না দেখার জন্য। আবার শেষের দিকে গিয়ে আল্টাসনোগ্রাম করি, বাচ্চার ওজন ঠিক আছ কি না দেখার জন্য। যদিও এটা নিয়মমাফিক। তবে আজকাল ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন বলেছে, একটা মা যদি চারটা চেকআপ করে, একটা যদি সে চার মাসে করে, সাত মাসে করে, আরেকটি ৩৬ সপ্তাহ এবং তার পরে যদি একটা চেকআপ করে তাহলেও একে নিয়মিত চেকআপে ফেলতে পারি।
প্রশ্ন : রোজার সময় সবকিছু মেনে চলে একজন মায়ের রোজা রাখা সম্ভব কি না এবং কখন এটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে?
উত্তর : ধর্মমতে, রোজার সময় যদি খুব জটিল কোনো সমস্যা না থাকে তবে সেই মা রোজা রাখতে পারেন। তবে ধর্মে এটাও বলা হয়েছে, অসুবিধা হলে তিনি না রেখেও পারবেন। অনেকে আমাদের কাছে প্রশ্ন করেন আপনি তো বললেন সারা দিনে একটু একটু করে খান। পানি খান। তাহলে আমি রোজা রাখলে এগুলো কীভাবে মেনে চলব। এই মায়ের ক্ষেত্রে আমরা যদি খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দিই তাহলে রোজা রাখতে পারেন। দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা ইফতার ভেঙে ভাজাপোড়া এ ধরনের খাবার খেতেই ব্যস্ত হয়ে যাই। এই জিনিসটি না করে তিনি যদি এমন কোনো জিনিস খান, যাতে প্রোটিন আছে তাহলে ভালো হয়। ধরে নিলাম একটা ডিম, একটু নুডলস কিংবা একটু ভাত-মাছ খেলেন, কিছু ফলের রস খেলেন তারপর একটু লিকুইড-জাতীয় খাবার খেলেন, তাহলে ভালো হয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সে বারবার এই খাবারগুলো খেতে পারে। তার যদি ক্যালরিটা মেনে চলাতে পারি, তাকে যদি ডায়েটে অভ্যাসটা শিখিয়ে দিই তাহলে হয়তো সে রোজা রাখতে পারে।
তবে অন্যদিকে আমি এটাও বলব যে মায়ের ইউনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন তখন তাঁর প্রচুর পরিমাণ পানি সারা দিনে খেতে হবে, সে ক্ষেত্রে রোজা রাখাটা মুশকিল। আর এই জন্য আল্লাহ যে আমাকে মাফ করেন নাই তা তো নয়। রোজাটি প্রয়োজনে পরবর্তীকালে করে নেবে।
প্রশ্ন : সেহরির সময় গর্ভবতী মায়ের কী ধরনের খাবার কী পরিমাণ খাওয়া উচিত?
উত্তর : আমি বলব না যে তাঁকে পেট ভরে খাওয়া উচিত। কারণ পেট ভরে যদি একজন গর্ভবতী মা খান, তিন হয়তো সকাল হতে হতেই বমি করবেন। একজন গর্ভবতী মায়ের খাবার হওয়া উচিত অল্প এবং ঘন ঘন। মান ভালো হতে হবে। প্রোটিন থাকতে হবে, মাছ-মাংস খেতে হবে। কার্বোহাইড্রেট তো হবেই, ভাত-রুটি খাবেন। তাঁকে ভিটামিনযুক্ত কিছু খাবার দিতে হবে। সবজি দিতে হবে। তার সঙ্গে পানি খেতে হবে। আমরা বলি, বেশি খাওয়ার দরকার নেই, তবে মানসম্পন্ন খাবার খেতে হবে।