গরমে শিশুকে সুস্থ রাখতে যা করবেন
বৈশাখের তীব্র দাবদাহে দেখা দিতে পারে নানা রকম অসুখ-বিসুখ। এসব অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়ারিয়া, অবসাদগ্রস্ততা, সামার বয়েল বা ত্বকের ফোঁড়া, নাক দিয়ে রক্তপড়া, ঘামাচি ও হিটস্ট্রোক।
তীব্র গরমে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়েন জ্বরে। জ্বরের সঙ্গে হয় ডায়রিয়াও। জ্বরের মাত্রা একটু বেশি থাকে। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত ওঠে শরীরের তাপমাত্রা। তবে প্যারাসিটামলেই সেরে যায় জ্বর।
বৈশাখের তীব্র গরমে অনেকেই আক্রান্ত হয় অবসাদগ্রস্ততায়। সঙ্গে অনেকেরই থাকে মাংসপেশিতে খিঁচুনি। তীব্র গরমে এ ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত। মাঝেমধ্যে স্যালাইন পানিও পান করতে হবে। এ ছাড়া ডাবের পানি কিংবা তাজা যেকোনো ফলের রস হলে তো আরো ভালো। পানি সঙ্গে সামান্য লবণ মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই বাইরের খোলা খাবার খাওয়া উচিত নয়। বাইরের শরবত খেয়ে উল্টো পেটের পীড়া, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
পানি পান পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে শরীর অবসাদগ্রস্ত লাগার পাশাপাশি চোখজ্বালাসহ বিভিন্ন শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেবে। এমনকি হিটস্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে। হিটস্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা, যখন প্রচণ্ড গরমের কারণে সৃষ্ট জটিলতায় রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। হিটস্ট্রোক আক্রান্ত ব্যক্তির গায়ে সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি স্প্রে কিংবা ঢেলে শরীর ভিজিয়ে দিতে হবে। রোগী অজ্ঞান হলেও এই কাজটি করতে হবে। রোগীর শরীরে যে পানির প্রবাহ দেওয়া হবে সেটি ঠান্ডা হওয়ার দরকার নেই।
এ ছাড়া রোগীর শরীরে পরিধেয় যতটুকু সম্ভব খুলে ফেলতে হবে এবং ঘরের ফ্যান কিংবা এসি চালিয়ে দিতে হবে। এ ব্যবস্থা না থাকলে রোগীকে পাখা দিয়ে বাতাস করতে হবে। ইতিমধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে হিটস্ট্রোক একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি। হিটস্ট্রোকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পাশাপাশি তীব্র গরমে দেখা দিয়ে থাকে সামার বয়েল অর্থাৎ গরমকালীন ফোঁড়া ও গোটার প্রকোপ। সেই সঙ্গে ঘামাচির যন্ত্রণা তো রয়েছেই। গরমজনিত গোটা এবং ঘামাচিতে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। ত্বক নাজুক হওয়ার কারণেই শিশুদের মধ্যে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং অতিসংবেদনশীল ত্বকের অধিকারী শিশুদের মধ্যে এ সমস্যা আরো প্রকটভাবে দেখা দিতে পারে।
গরমকালীন গোটা ও ঘামাচির এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য শিশুদের যতটা সম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে শিশুকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরমে ঘামাচি এড়াতে অনেকে শিশুকে খালি গায়ে রাখেন, এটি ঠিক নয়। খালি গায়ে রাখলে ঘামাচি আরো বেশি হয়। পাতলা সুতির পোশাক পরিয়ে রাখলে তা ঘাম শুষে নিয়ে ত্বক ঘামাচিমুক্ত রাখার চেষ্টা করে। গরমকালীর গোটা মাথায় বেশি দেখা দেয় বলে অনেকেই শিশুর মাথার চুল কামিয়ে ফেলেন। কিন্তু চুল কামানোতে কোনো লাভ হয় না। গরমকালীন ফোড়ায় আগাম প্রতিরোধ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন ইরেথ্রোমাইসিন লোশন। ঘামাচি অনেক সময় বড় আকার হলে তখনো ইরেথ্রোমাইসিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ঘামাচি ও গরমকালীন ফোঁড়া আকারে বেশ বড় হয়ে গেলে কিংবা পেকে গেলে তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করাতে হবে।
শিশুর ঘামাচিতে ক্যালামিলন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ক্যালামিলন লোশন ব্যবহারের একটি নিয়ম রয়েছে। গোসলের আধা ঘণ্টা আগে ক্যালামিলন লোশন সারা শরীরে লাগাতে হবে এবং গোসল করে সেটি ধুয়ে ফেলতে হবে। এভাবে দৈনিক দু’বার করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। ঘামাচির জন্য বহুল ব্যবহৃত প্রিকলি হিট পাউডার ব্যবহারেও উপকার রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে প্রকৃত প্রিকলি হিট পাউডার খুঁজে নিতে হবে। ঘামাচি প্রতিরোধে প্রিকলি হিট পাউডার কিংবা টেলকম পাউডার বেশ কাজে আসে।
দুঃসহ এই গরম গোটা ও ঘামাচির প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিয়ে ভাবলেই চলবে না। পাশাপাশি শিশুকে প্রচুর পানি ফলের শরবত কিংবা তরল পানীয় পান করাতে হবে। তা না হলে শিশুরা খুব সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়বে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ