গরমে যেসব অসুখ হয়
সময়টা গরমের। বাইরে তীব্র রোদ, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদহ। এই সময়ে কিছু অসুখ-বিসুখ আপনাকে বিপর্যস্ত করতে পারে। জেনে নিন সেগুলো সম্পর্কে।
পানিশূন্যতা
গরমে ঘাম হয় প্রচুর। ঘাম হলে শরীর পানিশূন্য হয়। পানিশূন্যতা শরীরকে দুর্বল করে তোলে। রক্তচাপ কমে যায়। অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে কেউ কেউ। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কিডনিও আক্রান্ত হতে পারে। তাই প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খান।
জ্বর
আবহাওয়ার চরম ভাবের কারণে এ সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা নাজুক অবস্থায় পড়ে। সুয়োগটা নেয় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস। এ সময়ে তাই ভাইরাস জ্বরের প্রকোপটা থাকে বেশি।
ঢাকা শহরে এখন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের প্রকোপ বেড়েছে। উচ্চ মাত্রার জ্বর, র্যাশ, অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, বমির ভাব চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণ। ডেঙ্গু জ্বরের মতো চিকুনগুনিয়াও মশাবাহিত রোগ। এডিস মশার কামড়ে এই রোগ হয়। নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। জ্বর হলে প্যারাসিটামল খাবেন, প্রচুর পানি ও ফলের রস খাবেন। অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। প্রতিরোধের উপায় হলো মশা থেকে নিজেকে বাঁচানো। দিনে ঘুমালে মশারি টাঙাবেন। মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করুন।
এ ছাড়া এ সময়ে ইনফ্লুয়েঞ্জাও হতে পারে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও একই কথা। প্যারাসিটামল খাবেন। সঙ্গে প্রচুর পানি এবং পানিজাতীয় খাবার খাবেন।
হিটস্ট্রোক
খুব গরমে হিটস্ট্রোক হয়। এটি একটি ভয়ংকর সমস্যা। প্রথমে হয় হিট ক্র্যাম্প। শরীর ব্যথা করে, পিপাসা লাগে, শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। এর পরেই আসে হিট একজশন। এ অবস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়, মাথাব্যথা করে, চেতনা লোপ পেয়ে আবোলতাবোল কথা বলতে পারে। এ রকম অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হয়। তা না হলে রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা কাজ করে না। রোগীর আর ঘাম বের হয় না। তখন রোগীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটও ছাড়িয়ে যায়। ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায়। রক্তচাপ কমে যায়, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় রোগীকে দ্রুত আইসিইউতে নিতে না পারলে রোগী মারা যেতে পারে।
পেটের অসুখ
গরমে পিপাসা মেটাতে অনেকেই এ সময় বাইরের পানি পান করে। রাস্তার পাশে বানানো বিভিন্ন ধরনের শরবত খায় অনেকেই। এগুলো পানিবাহিত রোগের অন্যতম উৎস। টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিসের মতো রোগ এ সময়টায় অনেক বেশি দেখা যায়। তাই বাইরের পানি বা শরবত পান থেকে বিরত থাকুন।
ত্বকের অসুখ
অতিরিক্ত গরমে এ সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির কারণে কারো কারো ত্বকে অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে ফুসকুড়ি, লাল লাল র্যাশ, চুলকানি হতে পারে। ঘামাচি এ সময়ে ত্বকের একটি অতি সাধারণ সমস্যা। এ ছাড়া ঘাম শরীরে জমে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে। সমস্যা বেশি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ।