শিশু গরমে পরিশ্রান্ত : কী করবেন?
দুপুর রোদে বাইরে মাঠে দৌড়াদৌড়ি বা খেলাধুলা করা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিন্তু শিশুদের পছন্দ হলো খেলাধুলা। এমনকি মধ্যদুপুরে রৌদ্রও তাদের নিরস্ত করতে পারে না। তাই যেসব শিশু কোনো খেলার দলে নাম লিখেছে বা এমনিতেই খেলতে ভালোবাসে, তাদের মা-বাবার অবশ্যই ‘হিট এগজোশন’ বা ‘গরমে পরিশ্রান্তি’ নামক এই বিপজ্জনক অবস্থাটি সম্পর্কে সদা সতর্ক থাকতে হবে। স্বাভাবিক গরমের সময় ঘাম বের হয় এবং ত্বকের মাধ্যমে দেহ থেকে তাপ বিকিরণ হয়ে দেহ ঠান্ডা থাকে।
তবে যখন বাইরে সত্যি সত্যি খুব বেশি গরম পড়ে এবং শিশু খুব বেশি পরিশ্রমের খেলা খেলে, তখন দেহ ঠান্ডা রাখার এই প্রাকৃতিক নিয়ম নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে শিশুর এত বেশি ঘাম হতে পারে। এতে শিশুর ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা হয়। এতে করে শিশু দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। শিশুর ডিহাইড্রেশন বা পানিস্বল্পতা হয়। এতে করে কিন্তু এ সময় শিশুর দেহের তাপমাত্রা মাপলে তা স্বাভাবিক বা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি পাওয়া যাবে। এসবই তাপে পরিশ্রান্তির লক্ষণ। এ সময় যত শিগগির সম্ভব শিশুকে উত্তপ্ত বাইরের পরিবেশ থেকে সরিয়ে আনতে হবে।
এরপরও যত শিগগির সম্ভব শিশুকে উত্তপ্ত বাইরের পরিবেশ থেকে সরিয়ে আনতে হবে। যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো রয়ে যায় এবং শিশুর অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যায়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এখানে ‘তাপে পরিশান্তি’ বা ‘হিট এগজোশন’ এড়ানোর এবং যতক্ষণ ডাক্তার না পাওয়া যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত করণীয় এমন কিছু ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হলো :
শিশুকে আরামদায়ক ঠান্ডা বস্ত্র পরান
গরমের দিন শিশুকে পাতলা সুতির জামা পরানো ভালো। একদম ছোট্ট শিশু কাজ বা খেলাধুলা করতে পারে না ঠিকই, কিন্তু তাকে যদি বেশি কাঁথা বা কম্বল দিয়ে গরমের দিনে পেঁচিয়ে রাখা হয়, তাহলে তারও ‘হিট এগজোশন’ হতে পারে।
শিশুকে গাড়ির বাইরে নিয়ে যান
প্রচণ্ড গরমে গাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়ার সময় যদি গাড়ি কোথাও থামিয়ে রাখতে হয়, সে সময় কখনোই নিজেরা বাইরে দাঁড়িয়ে শিশুকে গাড়িতে রেখে আসবেন না; বরং নিজেরা ভেতরে বসে থাকলেও শিশুকে নিয়ে একজন খোলা বাতাসে বেরিয়ে আসুন। কেননা, শিশুর দেহের তাপমাত্রা এমনিতেই একটু বেশি থাকে। তাই অল্প গরমেই শিশুর দেহের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে ‘তাপে পরিশ্রান্তি’ আসতে পারে। এমনকি এর চেয়েও মারাত্মক অবস্থা ‘হিটস্ট্রোক’ হতে পারে।
গরমে শিশুকে বেশি করে তরল খাওয়ান
শিশুকে বেশি বেশি করে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। এমনকি শিশু তৃষ্ণার্ত না হলেও তাকে বারবার পানি খেতে দেওয়া প্রয়োজন। বেশি লাফঝাঁপ বা খেলাধুলা করলে গরমের দিনে একটি সাত-আট বছরের শিশুকে প্রতি ঘণ্টায় ছয় আউন্স পানি বা শরবত খেতে দিতে হবে। এর চেয়ে বড় শিশুদের আরো বেশি করে পানি/তরল খাবার দিতে হবে। সব সময় একটি পানির বোতল ভরে শিশুর নাগালের মধ্যে রাখলে ভালো হয়। এতে তৃষ্ণা পেলেই সে সেখান থেকে পানি নিয়ে খেতে পারবে।
শিশুকে রৌদ্রের তাপ থেকে দূরে রাখুন
গরমের মধ্যে শিশুকে খোলা মাঠে খেলতে না দিয়ে গাছের ছায়ায় বা ঘরের মধ্যে খেলার জন্য উৎসাহ দিন। শিশু যদি তারপরও বাইরে গিয়ে খেলতে চায়, তাহলে নিশ্চিত করতে হবে যে সে যেন খেলার মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়ে বিশ্রাম নেয় একনাগাড়ে না খেলে।
শরীর ঠান্ডা পানিতে মুছে দিন বা শরীরে পানি ছিটিয়ে দিন
এতে করে শিশুর শরীর ঠান্ডা থাকবে, যদি গরমে খেলার কারণে শিশুর মাথা ঝিমঝিম করে এবং বমি বমি লাগে, তাহলে একটি ঠান্ডা ঘরে নিয়ে যেতে হবে এবং প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। শরীরে পানি ঢেলে দিতে হবে বা ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিতে হবে। ঠান্ডা করে পানি দিয়ে শিশুকে গোসলও করানো যেতে পারে। এরপর ঘরে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে চালু করে দিতে হবে এবং এই ফাঁকে ডাক্তার ডাকতে হবে।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
তাপে পরিশ্রান্তির সঠিকভাবে চিকিৎসা না করালে তা মারাত্মক ‘হিটস্ট্রোক’-এর দিকে গড়াতে পারে। তাই রোদে ঘোরার পর এই লক্ষণগুলো দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে :
লক্ষণ হচ্ছে :
- মাথাব্যথা
- দুর্বলতা
- চিন্তাভাবনা গুলিয়ে যাওয়া
- শরীর অলস হয়ে পড়া
- খিঁচুনি বা ‘কোমা’
- ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি জ্বর
মনে রাখতে হবে, ডাক্তারের কাছে নিতে যতটুকু সময় লাগে, সেই ফাঁকে শিশুকে সম্পূর্ণ গা খালি করে ঠান্ডা জায়গায় রেখে শরীরে পানি ছিটিয়ে বাতাস করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।