গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট : কারণ ও চিকিৎসা
শ্বাসকষ্ট একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা। গর্ভাবস্থায় অনেক মায়েদের শ্বাসকষ্ট হয়। এর কারণ কী? এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৭১১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মাহবুবুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি আল-মানার হাসপাতালের রেসপিরেটরি বিভাগের সিনিয়র পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট হওয়ার পেছনে কারণগুলো কী?
উত্তর : শ্বাসকষ্ট ও গর্ভাবস্থা একটি জটিল সমস্যা। এখন অ্যাজমা রোগের অনেক চিকিৎসা বের হয়েছে। গর্ভবতী রোগীদের চিকিৎসা করার জন্য বিশেষ কিছু চিকিৎসা আছে। যখন একজন নারী গর্ভবতী হয়, যদি তার আগে থেকে অ্যাজমা থাকে তাহলে এটি সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। গর্ভবতী হওয়ার পর নারীদের শরীরে যে পরিবর্তন হয়, এতে শ্বাসকষ্টটা বেড়ে যায়। গর্ভের মাঝামাঝি অবস্থায় শ্বাসকষ্টটা কিন্তু কম থাকে। এটি একটি প্রাকৃতিক অবস্থা। শেষ পর্যায়ে প্রসবের আগে আগে এটি আবার বেড়ে যায়।
এই কথা মাথায় রেখে বিশেষ করে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন একজন গর্ভবতী নারীকে কীভাবে আরাম দেওয়া যায়, সেই বিষয়ে। অ্যাজমা হলে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং নিরাপদে প্রসব করাতে হবে।
যখন একজন মা গর্ভধারণ করেন, তাঁর যদি অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাহলে কী হবে? যখন সে শ্বাসকষ্টে ভুগবে তখন শরীরের অক্সিজেনটা কমে যাবে। অক্সিজেন কমে গেলে গর্ভের বাচ্চাটি ছোট হয়ে যাবে। অপরিপক্ব শিশু হবে। সব কিছু ছোট হয়ে যাবে। সময়ের আগে প্রসব হতে পারে। অনেক কিছু হতে পারে। এ জন্য চিকিৎসকরা সবসময় মাথায় রাখেন একটি স্বাস্থ্যকর শিশু কীভাবে প্রসব করা যায় এবং অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেই ক্ষেত্রে এখন আমাদের চিকিৎসকরা সুন্দর সুন্দর চিকিৎসা বের করেছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যাজমার জন্য অনেক ওষুধ আছে। খাওয়ার জন্য ওষুধ আছে, ইনহেলার আছে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি বিশেষ রিলিভার ওষুধ, প্রতিরোধমূলক ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। একে বলা হয় বুডেসোনাইট। নিয়মিত একজন মা যদি তার উদ্দীপকগুলোকে (ট্রিগার ফ্যাক্টর) নির্ণয় করতে পারেন, ঠিকঠাকমতো ওষুধ খান, তাহলে সুন্দরভাবে প্রথম দিকে অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মাঝামাঝি সময়ে গর্ভাবস্থায় অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকে। শেষের দিকে বেড়ে যায়। এ সময় শ্বাসনালির প্রদাহ হয়, ভাইরাল ইনফেকশনের সমস্যা হয়। এই জন্য গর্ভাবস্থার পুরো নয় মাস ইনহেলার ব্যবহার করে যেতে হবে।
প্রশ্ন : এই ওষুধ চালানোর পাশাপাশি তাদের প্রতি কি আপনাদের কোনো পরামর্শ থাকে?
উত্তর : দুঃখজনক হলেও সত্য যে একজন মা যখন গর্ভধারণ করেন তখন আগে যে ইনহেলার ব্যবহার করতেন, সেটি বন্ধ করে দেন। উনি মনে করেন, এই ইনহেলার দিলে বাচ্চাটার ক্ষতি হবে। আসলে কিন্তু সব ইনহেলার বাচ্চার ক্ষতি করে না। এখন যেই ওষুধটি এসেছে, সেটি কোনো ক্ষতি করে না। এটি মা ও শিশু দুজনের জন্যই নিরাপদ। একটি ওষুধ আছে শ্বাসনালির প্রদাহ কমানোর। এটি ব্যবহার করলে সে ভালো থাকবে। ধীরে ধীরে বাচ্চাটা বেড়ে ওঠবে। প্রসবের একদম শেষ পর্যায় পর্যন্ত ওষুধটি নিয়ে যেতে হবে। তার সঙ্গে সঙ্গে গর্ভকালীন যে সতর্কতা অবলম্বন সেগুলো করতে হবে।
প্রশ্ন : খাবারের প্রতি আপনাদের বিশেষ কোনো সতর্কতা থাকে কি?
উত্তর : খাবার-দাবারের জন্য গর্ভাবস্থায় কোনো কিছুতে সীমাবদ্ধতা নেই। খাবারে কিন্তু খুব কম অ্যালার্জি। যদি বিশেষ কোনো অ্যালার্জি থাকে, এটা একজন মা একজন রোগী ভালোভাবে জানেন। সেই ক্ষেত্রে একে এড়িয়ে চলাই ভালো।
প্রশ্ন : আমরা দেখি ইনহেলার নেওয়ার পেছনে অনেকেই অনাগ্রহ দেখান। সেই ক্ষেত্রে ইনহেলার না নিলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেটি কি আপনারা বুঝিয়ে দেন?
উত্তর : হ্যাঁ, বুঝিয়ে দিই। আমরা বলি ইনহেলার অ্যাজমার প্রথম চিকিৎসা। অনেকের ধারণা শেষ চিকিৎসা কি না। আসলে সেটি নয়। ইনহেলারে কোনো ক্ষতি হবে না। এটি যেহেতু লো ডোজে, মাইক্রোডোজে যায় তাই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। সুতরাং তিনি যেন ইনহেলার নিয়মিত ব্যবহার করেন, সেজন্য তাকে সব কাউন্সেলিং করতে হবে। তাই এটি লাগবে। কারণ অ্যাজমা এমন একটি জিনিস যেটি পুরোপুরি ভালো হয় না। নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে হয়। এই ক্ষেত্রে ইনহেলার ব্যবহার করা ভালো ও নিরাপদ।
প্রশ্ন : আগে থেকে সে হয়তো ভালো ছিল, তবে গর্ভাবস্থায় তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। এমন রোগীরা কি আপনাদের কাছে আসে?
উত্তর : আসে। আমাদের কাছে এমন অনেকেই আসে। সেই ক্ষেত্রে আমরা ধারণা করি ওনার শ্বাসকষ্টটা কতটুকু আছে। এরপর আমরা তাকে ব্যবস্থাপনা দেই। শ্বাসকষ্ট ব্যবস্থাপনার জন্য ধাপ অনুযায়ী চিকিৎসা আছে। উনি কোন পর্যায়ে আছে, আমরা পরীক্ষা করলে বুঝতে পারব। পরীক্ষা করে আমরা সেই পর্যায় অনুযায়ী চিকিৎসা করব। সব সময় আমরা তার গর্ভধারণকে মাথায় রেখে চিকিৎসা করব।
একজন গাইনোকোলজিস্টের পাশাপাশি অ্যাজমার চিকিৎসা যে করছেন তাঁর তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে। এটি আসলে দলগত চিকিৎসা।