শিশুদের মলদ্বারের রক্তক্ষরণের চিকিৎসা কী?
সাধারণত আমাশয়, রেক্টাল পলিপ ইত্যাদি কারণে শিশুদের মলদ্বার দিয়ে রক্ত যায়। সমস্যাটি কেন হচ্ছে সেটি বুঝে চিকিৎসা করলে দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।
এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’- এর ২৭০৯তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ছামিদুর রহমান। বর্তমানে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : আপনাদের কাছে রোগীকে নিলে কীভাবে নির্দিষ্ট করেন যে কী কারণে সমস্যাটি হচ্ছে? এবং কী ব্যবস্থা দেন?
উত্তর : একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমি চিন্তা করি, কেবল চিকিৎসা করাই আমার দায়িত্ব নয়। মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। তাদের সমস্যাটি নিয়ে একটি ধারণা দিতে হবে। যদি সঙ্গে জ্বর থাকে, চাপ দিয়ে পায়খানা করে, পিচ্ছিল পদার্থের মতো যায়, অল্প অল্প রক্ত যায়, রক্তের রং পরিষ্কার না হয়, তাহলে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া ভালো। চিকিৎসকরা তাদের পরামর্শ দেবেন, ওষুধ দেবেন। এতে রোগী ভালো হয়ে যাবে।
সব বাবা-মা চায়, শিশুর জন্য সর্বোচ্চ যত্ন নিতে। আমার মনে হয় সেই ক্ষেত্রে তারা যদি একটু সাবধানতা অবলম্বন করেন তাহলে ভালো হয়। যেমন : পানি ফুটিয়ে বা ফিল্টারে দেওয়া। যেকোনো পদ্ধতিতেই বিশুদ্ধ পানি খাওয়ালেই এই সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
আর যদি দেখা যায় কোনো ব্যথা নেই, কোনো কোনো সময় লাল গুটি বের হয়ে আসে, তাহলে আমরা রেক্টাল পলিপ মনে করব। সেই ক্ষেত্রে একজন শিশু সার্জনের কাছে যেতে হবে। একটি সহজ উপায়ের মাধ্যমে এটি নিরাময় সম্ভব।
আর যদি বাচ্চার এনাল ফিসার হয়, তাহলে খাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিতে হবে। পায়খানার জন্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিন যেন আঁশজাতীয় শাক-সবজি খায়। যদি খিচুরি খায়, তাহলে বিভিন্ন ধরনের শাক সবজি মিশিয়ে খাওয়ান। ফল খেলে যেন খোসাসহ খায়। যেই খাবার খেলে পায়খানা নরম হবে সেই ধরনের খাবার খাওয়াতে হবে।
ছয় মাস থেকে এক বছরের কোনো বাচ্চার যদি খাবার শুরুর পর পর পেটে ব্যথার আলামত দেখা দেয়, পায়খানা না হয়ে পায়খানার রাস্তা দিয়ে শুধু রক্ত যায় তাহলে কিন্তু একটি গুরুতর সমস্যা। এই সমস্যায় নাড়ির একটি অংশ , আরেকটি অংশের মধ্যে ঢুকে যায়। এই বাচ্চাগুলোর ক্ষেত্রে আপনারা দেরি না করে শিশু সার্জারি বিভাগে যাবেন।
আশা করা যায় শিশু সার্জনরা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। বেশিক্ষণ থাকলে কিন্তু নাড়িটা পঁচে যায়। আর অল্প সময় থাকলে আমরা একে অস্ত্রোপচার করে ঠিক করে দিতে পারি। এতে বাচ্চা একদম স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আমি মনে করি, আমাদের প্রথম দায়িত্ব শুধু চিকিৎসা দেওয়া নয়। এর সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য দুটো মিনিট যদি আমরা সময় ব্যয় করি, তাহলে সবার মধ্যে সাধারণ একটি ধারণা বৃদ্ধি পাবে।
আমরা ডাক্তার বানাচ্ছি। তবে সোশ্যাল সায়েন্স কিন্তু আমাদের মধ্যে যুক্ত নেই। এই যে কাউন্সেলিং , সম্পর্ক তৈরি—এই জিনিসগুলোর কথা শিক্ষকরা বলি। তবে বাড়তিভাবে জানার প্রয়োজন আছে।
আসলে আমাদের তো এটি পেশা, একে আমরা অস্বীকার করব না। পাশাপাশি আমাদের মনে করতে হবে, আমরা এই দেশেরই সন্তান। সামাজিক কিছু দায়িত্ব আমাদের আছে। আমরা যারা প্রবীণ হচ্ছি আমাদের সচেতনতা বাড়িয়ে একটু রোগীর সঙ্গে যদি সময় দেই, তাহলে কিন্তু এই বিষয়টি তৈরি হবে।