জরায়ুমুখের ক্যানসারের লক্ষণ কী
জরায়ুমুখের ক্যানসার খুব বেশি বাড়ার আগে প্রাথমিক অবস্থায় কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের ২৬৩৫তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। বর্তমানে তিনি জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : একজন নারী যদি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন, সেই ক্ষেত্রে ক্যানসার হওয়ার আগেই কি কোনো প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ে?
উত্তর : এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা যখন বলি প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার নির্ণয়, এটিও আমরা দুটো স্তরে করতে পারি। প্রথমত কোষের ভেতর যে প্রক্রিয়া শুরু হয়, একটি পর্যায় গিয়ে লক্ষণ দেখা যায়। লক্ষণ দেখার পরেও অনেকে বিষয়টি নিয়ে ভাবেন না লজ্জায় বা সংকোচের কারণে। আমরা বলতে চাই, লক্ষণ দেখামাত্রই যেন তিনি চিকিৎসকের কাছে আসেন। এর জন্য আমাদের লক্ষণগুলো সাধারণ মানুষকে বলতে হবে।
প্রথম যদি কোনো নারীর ঋতুস্রাবের রাস্তায় অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয়, এই রক্তক্ষরণের পরিমাণ যদি হঠাৎ করে বেড়ে যায়, সময়কাল যদি দেখা যায়, আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে, মাসের মাঝখানে যদি এ রকম রক্তপাত হয়, মেনোপজ হয়ে যাওয়ার পর যদি হঠাৎ রক্তপাত হয়, শারীরিক সম্পর্কের সময় যদি হঠাৎ রক্তপাত হয়, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যদি বেশি যেতে থাকে, আর রোগ যখন আরেকটু বেড়ে যায়, তখন আরো কিছু জটিলতা দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেও কিন্তু ক্যানসার নির্ণয় করা যায়। সেটা হলো জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিং। যারা আপাতদৃষ্টিতে সুস্থ, যাদের মধ্যে ক্যানসারের লক্ষণ এখনো দেখা দেয়নি কিন্তু জরায়ুমুখের ক্যানসার বা যেকোনো ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে—এ রকম নারীদের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়। যদি ক্যানসার থাকে সেটা নির্ণয় করাও সম্ভব। এটি হলো স্ক্রিনিং।
জরায়ুমুখের ক্যানসারে কোষের মধ্যে পরিবর্তন হওয়া থেকে, আগ্রাসী পর্যায়ের ক্যানসার রূপান্তর হতে, এই সময়ের মধ্যে যদি আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি, লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগেই বের করে আনতে পারি, এর জন্য খুব সহজ পদ্ধতি আছে। একটি ছিল আগে প্যাপটেস্ট বা প্যাপসমেয়ার। স্পেচুলা (একধরনের কাঠির মতো) দিয়ে জরায়ুমুখ থেকে কষ নিয়ে আসা হয়, সেটা দিয়ে মাইক্রোস্কোপের নিচে পরীক্ষা করলে কোনো অস্বাভাবিক কোষ আছে কি না, ক্যানসার কোষ আছে কি না—সেটা পরীক্ষা করা যায়। এটা হলো প্যাপটেস্ট। এটাও আমরা করতে পারি। বাংলাদেশে যেহেতু ওই রকম প্যাথলজিস্টের সংখ্যা কম, আবার টাকার বিষয়ও আছে (প্রায় দুই হাজার টাকা লাগে), এ জন্য আরেকটি সহজ পদ্ধতি আছে—ভায়া। এখানে কোনো মাইক্রোস্কোপ লাগছে না। একই প্রক্রিয়ায় জরায়ুমুখের ভেতর থেকে সোয়াপস্টিক দিয়ে বিশেষ এক ধরনের এসিডে ভেজানোর পর পরীক্ষা করা হয়। ভিজিয়ে ওই জায়গায় স্পর্শ করা হয়, করার পর ওই জায়গায় যদি সাদা দাগ পড়ে যায়, তাহলে আমরা বলি ভায়া পজিটিভ। ভায়া পজিটিভ মানেই ক্যানসার, তা কিন্তু নয়! এর পরে নিশ্চিত করার জন্য আরো কিছু পরীক্ষা করতে হয়।
আর প্রাথমিক প্রতিরোধের জন্য আরেকটি বিষয় আছে ভ্যাকসিন বা টিকা। এইচপিভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে টিকা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। বেসরকারিভাবেও দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গাজীপুরে চালু করা হয়েছে। আমরা বলি যে, যদি ১৫ বছর বয়সের নিচে বা বিয়ের আগে অন্তত এই টিকা যদি দেওয়া হয়, তাহলে ঝুঁকি অনেক কমে যাবে।