অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয় কেন?
অনেক সময় ভুল করেই আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে থাকি। আবার খেতে খেতে মাঝপথেই অ্যান্টিবায়োটিক ছেড়ে দিই। এতে অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হয়ে পড়ে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৬১২তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. ওয়াইজা রহমান। বর্তমানে তিনি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্সি কথাটি ব্যাপক প্রচারিত। বিষয়টি আসলে কী?
উত্তর : অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্সকে আমরা বলতে পারি যে এই সময়ের বার্নিং ইস্যু। কিন্তু খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ বুঝতে পারি না অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স কিংবা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসটেন্স কী? কিংবা কাকে বলে?
আমি খুব সহজভাবে বলার চেষ্টা করব। একজন রোগী যেকোনো অসুখের জন্য, একটি সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক খায়। অ্যান্টিবায়োটিক এই নামটা কিন্তু মোটামুটি শিক্ষিত, অশিক্ষিত সকলে জানি ও বলি। আমরা বলি যে অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দিয়েছে বা অ্যান্টিবায়োটিক ক্যাপসুল দিয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক যখন আমরা খাই, সেটা যখন একজন চিকিৎসক দেবেন, আপনি জানেন যে একটি নির্দিষ্ট সময়ে খেতে হবে। একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর উনি খাবেন, কত দিন খাবেন—এভাবে করে একটি চিকিৎসাপত্রে লেখা থাকে। কিন্তু প্রায়ই যেটা হয়, এ রকম কোনো নিয়মকানুন আমরা মানি না। এমনকি চিকিৎসকের কোনো চিকিৎসাপত্র ছাড়াই খেয়ে ফেলি।
আমরা এটা কখন খাচ্ছি? ইনফেকশনের ক্ষেত্রে। অনেক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস জীবাণু খুব দৌড়াদৌড়ি করছে। আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। প্রচুর পরিমাণ জীবাণু আমার শরীরে। তাদের মেরে ফেলার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক। আমার যেটা হলো, আমি অ্যান্টিবায়োটিকটা পেলাম, তবে এই অ্যান্টিবায়োটিকটা যথাযথ পরিমাণে, যথাযথ কাজের হলো না। তখন কী হবে? অ্যান্টিবায়োটিক যখন খাচ্ছে একজন মানুষ, তখন ব্যাকটেরিয়া সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যখন সঠিক নিয়ম অনুসারে একজন মানুষ অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছে না, তখন শুধু ব্যাকটেরিয়াগুলো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মারা যাচ্ছে না।
এই জীবাণু যখন মারা যাবে না, সে কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন উপায় খুঁজবে যে সে কীভাবে বেঁচে থাকবে? আপনি যেভাবে বেঁচে থাকতে চাইছেন, ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুও বেঁচে থাকতে চাইছে। তখন সে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে আরো শক্তিশালী হবে। তার বিরুদ্ধে আপনি যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সেও আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এবং সে আরো শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করবে। তবে আপনি কিন্তু তত দিনে অ্যান্টিবায়োটিক বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা খাচ্ছেন না। এরা তখন খুব শক্তিশালী হয়ে আপনার শরীরে বসে আছে।
একজন মানুষের জীবন যত দিন, ব্যাকটেরিয়ার জীবন কিন্তু কয়েক ঘণ্টা। কিংবা আমাদের দিন হিসেবে কিন্তু দু-একদিন। তার কিন্তু লাখ লাখ প্রজন্ম চলে আসছে। এভাবে করে সে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে যাচ্ছে। আপনার অ্যান্টিবায়োটিকটিকে কিন্তু সে চিনে রাখল যে এটা আমার শত্রু। এরপর আপনি যখন এটা দেবেন, সে কখনোই আর কাজ করবে না। খুব ভয়ংকর কোনো সংক্রমণ বা অসুস্থতায়, আমাদের চিকিৎসকদের হাতে সেই রোগীর জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে না। সব অ্যান্টিবায়োটিক রেজিসটেন্স বা অকার্যকর হয়ে যাবে। খুবই একটি ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে আমরা চলে যাব।