কথা আর সুরে শেষ হলো ‘ভূপেন হাজারিকা উৎসব’
উপমহাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকা ছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। তাঁর গান এ দেশের মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জানিয়েছে সম্মাননা। গতকাল ৮ সেপ্টেম্বর ছিল বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু-একাধারে গায়ক, সুরকার ও কবি ভূপেন হাজারিকার নব্বইতম জন্মজয়ন্তী। তাঁর জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিনের বিশেষ আয়োজন ‘ভূপেন হাজারিকা উৎসব’।
ভূপেন হাজারিকার কথা আর গানের মূলমন্ত্র ‘ভালোবাসা’। এই মন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে তাঁর রেখে যাওয়া আলোর উজ্জ্বলবর্তিকায় ‘সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের দিগন্ত’ প্রসারিত হবে—এ প্রত্যাশায় অনুষ্ঠিত হয় ‘ভূপেন হাজারিকা উৎসব’। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ- এর যৌথ আয়োজনে এবং ভারতের ‘ভূপেন হাজারিকা কালচারাল ট্রাস্ট’-এর সহযোগিতায় ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয় এই আয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল এই আয়োজনের সমাপনী দিন। শেষ দিনের এই আয়োজনে কথামালা আর কলকাতার জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘দোহার’ গানের সুরে স্মরণ করেছে বরেণ্য এই সংগীতজ্ঞকে।
সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সাংবাদিক অজিত ভূইয়া ও সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন বিহারের সংগীতশিল্পী কালিকা প্রসাদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল। সভাপতিত্ব করেন ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সমন্বয়ক এ এস এম সামছুল আরেফিন।
স্মৃতিচারণ করে ড. গওহর রিজভী বলেন, ‘কিংবদন্তি এই শিল্পী এসেছিলেন আমার বাসায়। আমার বাসায় তাঁর গানের আসর বসেছিল। সে স্মৃতি কখনো ভোলার নয়।’
পশ্চিমবঙ্গের গানের দল ‘দোহার’-এর প্রধান কালিকা প্রসাদ নানা স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘পঞ্চাশ-ষাটের দশকে তিনি বাংলা গানে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। আস্থাহীনতার বিপরীতে তিনি আস্থার গান গেয়েছেন। আধুনিক গানে তিনি মানুষের কথা বলেছেন, জীবনের কথা বলেছেন।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বাংলাদেশের ‘পরম বন্ধু’ ভূপেন হাজারিকা স্মরণে বলেন, ‘মনুষ্যত্ববোধের অবমাননা যখনই হয়েছে, তখনই তার প্রতিবাদে বেজেছে তাঁর গান। মানবিকতার বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসক, অসাম্প্রদায়িকতা যখন ফণা তুলেছিল, তখন তাঁর গান আমাদের প্রতিবাদী করে।’
আসামের সাংবাদিক অজিত ভূঁইয়া বলেন, ‘ভূপেন হাজারিকা তাঁর কালে হয়ে উঠেছিলেন সাম্যবাদের প্রবক্তা।’
সবশেষে লোকগানের দল ভারতের দোহারের শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘মানুষ মানুষের জন্য’, ‘দোলা হে দোলা’, ‘গান হোক বহু আস্থাহীনতার বিপরীতে এক গভীর আস্থার গান’, ‘জীবন খুঁজে পাবি ছুটে ছুটে আয়’সহ ভূপেন হাজারিকা আর নিজেদের জনপ্রিয় সব গান।
এ উৎসব উপলক্ষে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার ভূপেন হাজারিকার সংগীত দর্শন ও গায়কী নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন ভূপেন হাজারিকার ভাইয়ের সহধর্মিণী মনীষা হাজারিকা ও লিয়াকত আলী লাকী।