চলচ্চিত্রের অবস্থা
দায়ী কে?
একের পর এক চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে, মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু সেগুলোর সবই কি মানসম্মত চলচ্চিত্র হচ্ছে? বা সব ছবি কি দর্শক টানতে পারছে? দর্শক ছবি দেখে কি আসলেই বিনোদন পাচ্ছেন? না বিরক্ত হচ্ছেন? এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজেদের সমালোচনাই করলেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিয়া আলাউদ্দি বলেন, ‘অনেক মানহীন চলচ্চিত্রের কারণে হতাশ হচ্ছেন দর্শক। ফলে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা সিনেমা হল থেকে। ইদানীং ডিজিটাল চলচ্চিত্রের নামে তৈরি হচ্ছে টেলিফিল্ম, এমনকি ডিজিটাল ছবির নামে যা হলে চলছে সেগুলো নাটক হলে কোনো টিভিতেও চলত না। দর্শক হলে এসে টাকা দিয়ে এসব দেখে আরো হলবিমুখ হচ্ছে।’
চিত্রপরিচালক বদিউল আলম খোকন বলেন, ‘এখন যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদের বেশির ভাগই টাকা কামাতে এসেছেন। কেউই অভিনয় শিখতে চান না। দু-একটা ছবি মুক্তি পেলেই টাকা চান পাঁচ লাখ, একবার চিন্তা করেন না তাঁর ছবি কয়জন মানুষ দেখছে। পুরোনোদের মধ্যে একমাত্র শাকিব খান কাজ করছেন, সাথে আছেন অপু বিশ্বাস। এ ছাড়া যাঁরা কাজ করছেন, সবাই নতুন। এমন অনেক নায়ক-নায়িকা আছেন যাঁদের আমরা চিনি কিন্তু দর্শক চেনে না। কোনোদিন চিনতেও পারবে না। কারণ দর্শক চেনে অভিনয় দিয়ে, যেটা এঁরা জানে না, শেখার ইচ্ছাও নেই।’
আরেক পরিচালক সায়মন তারেক বলেন, ‘আমরা যখন সহকারী হিসেবে কাজ করতাম, তখন এটি ছিল টিম ওয়ার্ক আর এখন নিজে যখন ছবি বানাচ্ছি দেখি কী পরিমাণ অসহযোগিতা পাচ্ছি। এমনকি ঢাকার বাইরে শুটিং করা অবস্থায় অনেক শিল্পী ‘না’ বলে সেট থেকে চলে আসে। একবার চিন্তাও করে না কীভাবে শুটিং শেষ হবে, পরিচালকের কী হবে, প্রযোজক এর পরে আর ছবি বানানোর সাহস পাবেন কি না। কোনো কিছুতেই যেন তাদের কোন খেয়াল নেই, ভালো ছবি বানাবেন কীভাবে?’
পূর্ণিমা সিনেমা হলের ম্যানেজার মোহাম্মদ কাঞ্চন বলেন, ‘ইদানীং যেসব ছবি মুক্তি পাচ্ছে, তার বেশির ভাগ ছবিতে অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় জানেন না। ভালো অভিনয় না করতে পারলে দর্শক তাঁদের মনে রাখে না। এ কারণে প্রতি ছবিতেই তাঁদের নতুন মনে হয়। দর্শকদের কাছে নিজেদের কোনো জায়গা করতে পারছেন না।’
ত্রিশ বছর ধরে চলচ্চিত্রে সব ধরনের পোশাক ভাড়া দেন মোহাম্মদ কামরুল। তিনি বলেন, ‘এখন যেসব ছবি তৈরি হয়, সেগুলো নাটকের মতো। আমি ত্রিশ বছর ধরে কাজ করছি। নাটক, সিনেমা ও বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে মাল সাপ্লাই দিই। আগে নাটক করতে যে মাল লাগত, এখন সিনেমায় এর চেয়ে কম মালে শেষ করে দেয়। আমরা যেহেতু সব ধরনের মাল সাপ্লাই দিই, আমরা বুঝি, কে কী বানাচ্ছে। ইদানীং কিছু ছবির কাজ দেখলে মনে হয়, মিউজিক ভিডিওতে কাজ করছি। এভাবে কাজ চলতে থাকলে একসময় সিনেমা বন্ধ হয়ে যাবে।’
নায়ক শাহ রিয়াজ এক পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছিলেন, ‘আমাকে দেখানো হয় একধরনের ছবির গল্প। আর সেটে গিয়ে দেখি গল্প আরেক রকমের। আমাকে কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, একজন অভিনেতা হিসেবে আমার কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিচালকরা যদি আমাদের সাথে গল্প আর কাজের মিল না রাখেন, তাহলে সেই ছবি নিয়ে ঝামেলা হতেই পারে।’
কিছুদিন আগে নায়িকা ববিতা আক্ষেপ নিয়ে বলছিলেন, ‘এখন যে ছবিগুলো হচ্ছে সেগুলো আমার কাছে সিনেমা মনে হয় না। অভিনয় করতে গেলে কেমন যেন নাটক নাটক লাগে। তাই আমি ভালো গল্প, ভালো পরিচালক পেলে অভিনয় করব। অন্যথায় অভিনয় থেকে বিদায় নেব।’
বাংলাদেশের ছবির মান ভালো না-এমন অভিযোগ তুলে এরই মধ্যে ভারত থেকে ছবি আনার জোয়ার শুরু হয়েছে। এত সব ডামাডোলে, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা যখন একে অপরকে দোষারোপ করছেন, তখন আসলেই চলচ্চিত্রের অবস্থা কী? চলচ্চিত্রের অবস্থা শেষ পর্যন্ত ঠিক করবেন আসলে দর্শকরাই।