কুসংস্কারে ভরা বলিউড
কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। তাই যুক্তিতর্কে সমাধান মিলবে না সব সময়। স্রেফ বিশ্বাসের ওপর ভর করে আজও চলছে বহু মানুষ। ব্যতিক্রম নন বলিউডের রঙিন দুনিয়ার সেলিব্রিটিরাও। সবাই বলে, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নাকি তাঁরা! স্বপ্ন দর্শন থেকে হালফ্যাশনের ট্রেন্ড সব কিছুতেই নাকি ‘আইকন’ তাঁরা। অথচ সেই তাঁদের মাঝেই ঘাপটি মেরে রয়েছে অন্ধকার। কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরে ভাগ্যোদয়ের জন্য ব্যাকুল অনেকের এই রোল মডেলরা। কেউ ধারণ করছেন তাবিজ-কবচ, আংটি, পাথর, আবার কেউ বা মেনে চলছেন নানা নিয়মকানুন। কুসংস্কারকে আঁকড়ে ধরা বলিউডি সেলিব্রিটিদের কে কী করেন তারই এক ঝলক।
অমিতাভ বচ্চন : বলিউডের শাহেনশাহ বিশ্বাস করেন ভাগ্যে। একসময় সংকটে পড়া অমিতাভ গ্রহ-নক্ষত্রের দোষ কাটাতে ধারণ করেন নীলা ও পান্নার মতো পাথর। তারপরই নাকি ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’র মতো অনুষ্ঠান তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে ফের খ্যাতির শীর্ষে। সারা জীবন পরিশ্রম ও অভিনয়দক্ষতার গুণে সাফল্যের শিখরে আরোহন করলেও তিনি ভাগ্যে বিশ্বাসী। তাই জ্যোতিষীর বিধান মেনে আঙুলে ধারণ করেছেন পাথরখচিত আংটি। এমনকি পুত্রবধূর মাঙ্গলিক দশা কাটাতে সংকটমোচন মন্দিরে গিয়েও দিয়েছেন পূজার নৈবেদ্য। মন্দিরের এক গাছের সঙ্গে বিয়ে দিয়েও গ্রহ-দোষ কাটিয়ে নিয়েছেন। সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও তিনি কুসংস্কারকে উড়িয়ে দিতে পারেননি একেবারেই।
ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন : কুসংস্কারের ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারেননি বলিউডের এই গ্ল্যামার কুইন। মাত্র ২১ বছর বয়সে সাফল্যের শিখরে পৌঁছালেও আজও ভরসা রাখেন পাথরে। শ্বশুরের পরামর্শে এরই মধ্যে আঙুলে ধারণ করেছেন নীলা ও হীরের মতো দামি পাথরও। দীর্ঘদিন বাদে পর্দায় ফেরার আগে ভাগ্যেই সবচেয়ে বড় ভরসা রাখছেন অ্যাশ। এমনকি অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে সংসার পাতানোর আগে দাম্পত্য সুখের কামনায় সংকটমোচন মন্দিরে গিয়ে বিয়েও করে ফেলেছেন একটি গাছকে!
সালমান খান : নিজের ডান হাতের কবজিতে ধারণ করে নিয়েছেন বাবার দেওয়া নীল পাথর বসানো ব্রেসলেট। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ‘সল্লু’র কাছে ওই ব্রেসলেট এখন নিত্যসঙ্গী, যা কখনোই হাতছাড়া করতে রাজি নন তিনি। বিশ্বাস করেন, ওই পাথর বসানো ব্রেসলেট-গুণে যাবতীয় ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন তিনি।
কারিনা কাপুর খান : কাপুর পরিবারের এই মেয়ে ক্যারিয়ারের শুরুতেই ধারণ করে নিয়েছেন রক্তমুখী পলা আর পোখরাজ। বলিউড শাসন থেকে নবাব ঘরণী হওয়া-সব কিছুর মূলেই নাকি এই গ্রহশান্তির প্রভাব রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
শাহরুখ খান : ফাইভ-ফাইভ-ফাইভেই ভরসা বলিউড বাদশা শাহরুখের। বলিউডের বুকে একটানা ২৫ বছর রাজত্ব চললেও শাহরুখের বিশ্বাস, ভাগ্য আর ওই ৫৫৫ নম্বরের জোরেই নাকি তাঁর ক্যারিয়ার টিকে রয়েছে। অবাধ্য গ্রহদের ঠান্ডা রাখতে গ্রহরত্ন ধারণের পাশাপাশি ৫৫৫ নম্বর নিয়েই চলাফেরা করেন তিনি। এমনকি তাঁর গাড়ির নম্বর কিংবা মোবাইলের নম্বরেও রয়েছে ওই ৫৫৫ নম্বরটি।
ক্যাটরিনা কাইফ : ভাগ্যে বিশ্বাস করেন ক্যাটরিনা। ক্যারিয়ারের শুরুতে সালমানের হাত তাঁর মাথায় থাকলেও ভাগ্য ছাড়া তাঁর উত্থান যে সম্ভব ছিল না, তা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। এক যুগ ধরে বলিউডে কাজ করছেন দাপটের সঙ্গে, তবু এখনো ছবি মুক্তির আগে নিয়ম করে খাজা মইনুদ্দিন চিশতির (রহ.) দরগায় যেতে ভোলেন না ক্যাট। তাঁর বিশ্বাস, খাজা বাবার আশীর্বাদ সঙ্গে থাকলে নাকি তাঁর ছবি হিট হবেই!
আমির খান : বলিউডে ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত আমির মুখে যতই যুক্তিবাদ নিয়ে সরব থাকুন, ব্যক্তিজীবনে কুসংস্কারমুক্ত নন তিনিও। আমিরের ধারণা, ডিসেম্বর নাকি তাঁর ‘লাকি’ মাস! বিশেষ করে ডিসেম্বরে বড়দিনের আগে তাঁর ছবি মুক্তি পেলে নাকি সেই ছবি হিট হবেই, আটকাবার সাধ্য নেই কারো। এ কারণেই কয়েক বছর ধরে যাবতীয় ছবি মুক্তির জন্য ডিসেম্বর মাস তথা বড়দিনের সময়কেই বেছে নিয়েছেন তিনি। এমনকি ডিসেম্বর মাসকে পয়া মাস মনে করে তাঁর ছেলে আজাদের জন্ম যাতে ওই মাসেই হয়, সেই পরিকল্পনাও নাকি নিয়েছিলেন!
দীপিকা পাড়ুকোন : দৃঢ়চেতা এই নায়িকাও কুসংস্কারমুক্ত নন। তাঁর প্রতিটি ছবি মুক্তির আগে তিনি যেভাবেই হোক সিদ্ধি বিনায়কের মন্দিরে পূজা দিতে যাবেনই। দীপিকা মনে করেন, সিদ্ধি বিনায়কের আশীর্বাদ জুটে গেলে তাঁর ছবি সুপার ডুপার হিট হতে বাধ্য।
সঞ্জয় দত্ত : বলিউডের এই ‘মুন্না ভাই’ আজ কারাবাস করলেও ভাগ্যের ওপর অগাধ আস্থা রেখেছেন। সঞ্জয়ের বিশ্বাস, তাঁর জীবনে যা কিছু শুভ, সবই সম্ভব হয়েছে ৯ নম্বরের জন্য। এ কারণে তাঁর গাড়ির নম্বর ৪৫৪৫, অর্থাৎ (৪+৫=৯, ৪+৫=৯)। কারাবাস করলেও সঞ্জয় মনে করেন, এই ৯ নম্বরই তাঁর জীবনে ফের ভালো সময় ফিরিয়ে দেবে একদিন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া : বলিউডের এই নায়িকা টিনএজ বয়স থেকেই অগণিত মানুষের হৃদয় জয় করে ফেলেছেন। তথাপি নিজের ভাগ্য বদলাতে ভীষণভাবে আস্থা রাখেন গ্রহ, নক্ষত্র আর রাশি বিচারের ওপর। নিজের সময় বিচার করে প্রতি মাসেই ধারণ করতে থাকেন বিভিন্ন গ্রহশান্তির আংটি।
রণবীর কাপুর : মাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসেন এই বলিউড অভিনেতা। তাঁর ভাগ্যের যাবতীয় শুভ ফল মায়ের দৌলতেই হয়েছে বলে বিশ্বাস তাঁর। সেই সঙ্গে ৮ নম্বরকে জীবনের পয়া নম্বর বলেই মনে করেন তিনি। গাড়ির নম্বর প্লেটেও রয়েছে ৮ নম্বরটি। গোটা জীবনটাই ৮-এর খেলা বলে মনে করেন রণবীর।
বিপাশা বসু : অশুভ শক্তি যাতে ধারেকাছে ঘেঁষতে না পারে, সে জন্য ব্যস্ত থাকেন এই নায়িকা। অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটাতে নানা রকমের তুকতাক কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তার অন্ত নেই বিপাশার। বিশেষ করে, গ্রহরাজ শনি দেবতাকে সন্তষ্ট রাখতে নানা কাজ-কারবার করে থাকেন বিপাশা। এমনকি প্রতি শনিবার নিয়ম করে নিজের গাড়িতে লেবু আর মরিচ ঝোলাতেও ভোলেন না তিনি।
অক্ষয় কুমার : ছবি মুক্তির আগে নিয়ম করে দেশের বাইরে থাকাটাই সমীচীন বলে মনে করেন অক্ষয়! তাঁর বিশ্বাস, ছবি মুক্তির আগে তিনি যদি বিদেশে থাকেন, তাহলেই ছবি সাফল্য এনে দেবে।
শিল্পা শেঠি : জীবনে সাফল্যের যাবতীয় চাবিকাঠি লুকোনো রয়েছে তাঁর হাতের পান্না আর পোখরাজ পাথরের মধ্যে-এমনটাই বিশ্বাস করেন শিল্পা। নিজের আইপিএল টিম নিয়েও নানা কুসংস্কার রয়েছে তাঁর মধ্যে। রাজস্থান রয়্যালসের খেলা চলাকালীন শিল্পা হাতে দুটো ঘড়ি পরেন। রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটসম্যানরা যতক্ষণ ব্যাট করেন, ততক্ষণ নাকি পা সোজা করে বসে থাকেন!