আমার ফেমিনিজমটা মানবতারই অংশ: অপর্ণা সেন
অর্পণা সেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেত্রী। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর পরিচালিত ‘সোনাটা’ ছবিটি। ছবিটি প্রদর্শনীর আগে সংবাদ সম্মেলনে অপর্ণা সেন কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে নারীদের নিয়ে তাঁর ভাবনা, শাবনা আজমীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের রসায়ন ও অন্যান্য আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নাইস নূর।
এনটিভি অনলাইন: বাংলাদেশে এর আগেও এসেছেন। এবার এসে কেমন লাগছে?
অপর্ণা সেন: অবশ্যই অনেক ভালো লাগছে।
এনটিভি অনলাইন: ষোড়শ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আপনার পরিচালিত ও অভিনীত ‘সোনাটা’ ছবিটি প্রদর্শিত হচ্ছে। ছবিতে আপনি, শাবানা আজমী ও লিলেট দুবে তিন বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিতে নারীর স্বাধীনতা দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেখানে একটি সংলাপও আছে ‘আমরা এমনকি ফেমিনিষ্টও নই’। আপনার কাছে ফেমিনিজিমের সংজ্ঞা কী?
অপর্ণা সেন: ‘সোনাটা’ ছবিতে যে তিনজন মহিলা তাঁরা তিনজনই ওয়ার্কিং লেডি। অর্থনৈতিক অবস্থার নিয়ন্ত্রণটাই তাঁদেরই হাতে সুতরাং তাঁরা কারোর উপর নির্ভরশীল নয়।
তাঁরা নিজেদের উপার্জনেই বেঁচে আছে। সেই অর্থে তাঁরা ফেমিনিস্ট। কিন্তু ফেমিনিজমের জন্যে তাঁরা হয় তো কিছু করে না। এ জন্য শাবানা আজমী মজা করে বলেন যে, ‘আমাদের ছবিতে কোন আইটেম গান তো নেই, তাই ছবিটির সংলাপ ‘আমরা এমনকি ফেমিনিষ্টও নই’, এই লাইন শুনে সকলে মজা পেয়ে যায়, আচ্ছা, অপর্ণা সেনের ছবিতে এই লাইনটা কী করে এলো?
আমি ফেমিনিজমকে কী ভাবি এটা একটা কথা, এখন ফেমিনিজম কোথায় দাঁড়িয়েছে সেটা একটা কথা। একসময় একধরণের জঙ্গি ধরণের ফেমিনিজম ছিল। তবে ফেমিনিজম এখন সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে, সরে এসেছে বলব না্,এটার অগ্রসর হয়েছে। এখন যে কোন প্রান্তিক মানুষ তাঁকে কিন্তু তাঁর পরিধির মধ্যে ফেমিনিজম প্রভাবিত করে। আমার কাছে চিরকালেই ফেমিনিজমটা মানবতাবাদেরই অংশ ছিল। কারণ নারীরা মানব সমাজের একটা অর্ধেক অংশ। নারীকে বাদ দিয়ে মানব সমাজ হয় না। এই অর্ধেক মানব সমাজে যদি নারীরা অবদিমত থাকে তাহলে সমাজই অবদমিত হয়ে থাকবে। কাজেই আমার ফেমিনিজমটা মানবতারই অংশ।
এনটিভি অনলাইন : আপনার সঙ্গে শাবনা আজমীর সম্পর্কের রসায়ন চমৎকার। কাজের বাইরে আপনারা যখন নিজেরা গল্প করেন তখন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন কিংবা কথা বলেন? ছোট করে যদি একটু বলতেন?
অপর্ণা সেন : ছোট করে বলা যায় না। শাবনা আর আমার পরিচয় দীর্ঘদিনের। সবকিছু নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়। শাবানার সঙ্গে আমাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে আলোচনা হয়, নারীবাদ নিয়ে আলোচনা হয়,ও যে কাজ করছে গ্রামে, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়, সিনেমা নিয়ে আলোচনা হয়, সবকিছু, আসলে জীবন নিয়েই আলোচনা হয়।
এনটিভি অনলাইন : আপনি বলেছেন ইংরেজি ভাষায় ছবি নির্মাণে পশ্চিমবঙ্গের অনেক প্রযোজক অনাগ্রহী। বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তবে আপনি দীর্ঘদিন ধরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে চাচ্ছেন। কবে চলচ্চিত্রটি শুরু করবেন?
অপর্ণা সেন : এখনকার যে সমাজ, যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, আমাদের বা সামাজিক যে প্রেক্ষাপট, সেটা অনেকটা বদলে গেছে রবীন্দ্রনাথের ‘ঘরে বাইরে’র থেকে। তো আমি এখনকার সমাজের গল্প বলতে চাই।
এনটিভি অনলাইন : আপনাকে সময় দেয়ার ধন্যবাদ।
অপর্ণা সেন : আপনাকেও।