নানা আয়োজনে চাষী নজরুল ইসলামকে স্মরণ
আজ ১১ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কাহিনীচিত্রের পরিচালক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও একুশে পদকজয়ী নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলামের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১৫ সালের এই দিনে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি।
দিনটি স্মরণে আজ বৃহস্পতিবার বিএফডিসিতে পরিচালক সমিতির উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে স্মরণসভার। প্রয়াত পরিচালকের গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সমষপুরেও দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএফডিসির আয়োজন নিয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এফডিসিতে বাদ আসর উনার রুহের মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল ৪টায় জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটরিয়ামে স্মরণসভার আয়োজন করেছি।’
এদিকে সকাল ১০টায় স্থানীয়রা শ্রীনগর উপজেলার সমষপুরে তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সকাল থেকেই তাঁর বাসভবন ৯ কবি জসীমউদদীন রোডে দরিদ্রদের খাওয়ানো হয়।
চাষী নজরুল ইসলামের প্রধান সহকারী তারিখ শিকদার বলেন, ‘আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুরে এতিম খাইয়েছি। স্থানীয় মসজিদে মিলাদ পড়িয়েছি। তা ছাড়া উনার গ্রামের বাড়িতে সকালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন স্থানীয়রা।’
চাষী নজরুল ইসলাম ১৯৪১ সালের ২৩ অক্টোবর মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার সমষপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬১ সালে সৈয়দ মোহাম্মদ আওয়ালের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে পদার্পণ করেন।
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা ফতেহ্ লোহানী ও প্রখ্যাত সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার ওবায়েদ-উল-হকের সহকারী হিসেবে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কাহিনীচিত্র ‘ওরা ১১জন’ নির্মাণের মাধ্যমে ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ জীবনে অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন। চাষী নজরুল ইসলাম চারবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি।
এ ছাড়া অসংখ্য সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সর্বাধিক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ও সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রের নির্মাতা।
তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো—মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রাম, হাঙ্গর নদী গ্রেনেট, মেঘের পরে মেঘ; সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্র দেবদাস, শুভদা, চন্দ্রনাথ, রবিঠাকুরের সুভা, শাস্তি, বঙ্কিমচন্দ্রের বিষবৃক্ষ উপন্যাস অবলম্বনে বিরহ ব্যথা, শিল্পী হাসন রাজা প্রভৃতি। এ ছাড়া তিনি দেশবরেণ্য তিন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন জীবনভিত্তিক প্রামাণ্য চলচ্চিত্র মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে এম ফজলুল হক এবং দেশ-জাতি-জিয়াউর রহমান।