অর্থ পরিশোধ না করেই প্রযোজক-নায়ক লাপাত্তা
শুটিং প্রায় শেষ, তারপরও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ‘মাঝির প্রেম’ চলচ্চিত্রটি। ছবির পরিচালক রকিবুল আলম রকিব জানান আর একটি গানের দৃশ্য ধারণ করা বাকি, কিন্তু এরই মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়েছে ছবিটি। প্রযোজক অর্থ দিচ্ছেন না বলেই ছবির কাজ মাঝপথে আটকে গেছে বলে দাবি পরিচালকের।
গত বছরের ২২ নভেম্বর ছবির নব্বই ভাগ শুটিং সম্পন্ন হয়। তারপর আর এগোয়নি ছবিটির কাজ। যন্ত্রপাতির ভাড়া, কলাকুশলীদের পাওনা টাকা, এমনকি খাবারের টাকাও পরিশোধ করতে পারেননি প্রযোজক বীরজান বড়ুয়া ও ধীমান বড়ুয়া।
পরিচালকের সূত্রে জানা যায়, গত বছর মনোয়ার হোসেন ডিপজলের শুটিং বাড়ি ‘দিপু ভিলা’য় শেষ হয় ‘মাঝির প্রেম’ ছবির দৃশ্যের শুটিং। ছবিতে অভিনয় করেছেন বিন্দিয়া কবির ও ছবির প্রযোজক বীরজান নিজে। ছবির পরিচালকও অভিনয় করেছেন এই ছবিতে। তাঁর নায়িকা নবাগত মুক্তা। ছবিটি চট্টলা ফিল্মের ব্যানারে নির্মাণ করা হচ্ছিল।
এসব প্রসঙ্গে ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক একমুল ইসলাম বলেন, ‘এক বছর আগে ছবির শুটিং প্রায় শেষ করেছি। আর মাত্র একটি গানের শুটিং বাকি আছে, এমন সময় যে ছবির শুটিং বন্ধ হলো আর কাজ শুরু হলো না, একদিনের জন্যও এডিটিং হয়নি। আর হবে বলেও মনে হচ্ছে না। এখন তো ডিপজল সাহেবের বাড়িতে অন্য ছবির শুটিং করতে গেলেও ঝামেলায় পড়তে হয়।’
কেন প্রযোজক টাকা দেননি, বা কী হয়েছিল জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক বলেন, ‘আমরা সেখানে শুটিং করেছি ১৮ দিন। তারপর ছয়দিন বসেছিলাম, কারণ প্রযোজক টাকা দিচ্ছিল না। কোনো টেকনিশিয়ান টাকা না পেয়ে ক্যামেরা আটকে রেখেছিল। পরে প্রোডাকশন হাউজের মালিক ১০ হাজার টাকা টেকনিশিয়ানদের হাতে দিয়ে ক্যামেরা নিয়ে যায়। অথচ ক্যামেরা হাউজও কিন্তু টাকা পায়নি। শুটিং শেষ করে দেবে বলেছিল প্রযোজক। কিন্তু সেটাও তো আজ এক বছর হয়ে গেল।’
ছবির শুটিং চলাকালে খাবারের টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে কলাকুশলীদের আটকে রাখা হয়েছিল বলে জানান এই সহকারী পরিচালক। পরে ছবির পরিচালক রকিব কিছু টাকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। তাই খালি হাতেই শুটিং স্পট থেকে ফিরতে হয় কলাকুশলীদের।
সহকারী পরিচালক একরাম বলেন, ‘আমরা সাধারণত একটা ছবিতে দেড় লাখ টাকা পাই। কিন্তু এই ছবিটি শুরুর সময় ছবির পরিচালক আমাদের সাহায্য কামনা করেন, বলেন কোনো টাকা দিতে পারবেন না। শুধু প্রতিদিন এক হাজার করে টাকা দেবেন হাত খরচ। উনার দিকে তাকিয়ে কাজটি করি। কিন্তু শুটিং থেকে আসার পর চব্বিশ দিনের জন্য ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন। আমাকে ছয় হাজার টাকা দেন আর বাকিটা দিব-দিচ্ছি বলে এখনো ঘোরাচ্ছেন। এখন ফোন দিলে ফোন ধরেন না, প্রযোজক বীরজান ও ধীমান। বীরজান আবার ছবির মূল নায়ক।’
ছবির পরিচালক রকিবও জানালেন প্রযোজকরা এখন আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না। রকিব বলেন, ‘আমিও নিয়মিত ছবির প্রযোজককে ফোন দিচ্ছি, কিন্তু তিনি ফোন ধরেন না। এ ধরনের ঘটনা লজ্জাজনক।’
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি প্রোডাকশন হাউজের মালিক বলেন, ‘আমার এখানে ক্যামেরা, এডিটিং, ডাবিং, কালার কারেকশনের জন্য পাঁচ লাখ টাকায় চুক্তি করে ক্যামেরা নিয়ে শুটিং শুরু হয় এই ছবির। আমাকে বলেছিল শুটিংয়ের ফাঁকে টাকা দেবেন। কিন্তু টানা ১৮ দিন শুটিং করে কোনো টাকা দেন নাই। শুটিং শেষ হওয়ার পর আমি শুনতে পারি টেকনিশিয়ানরা টাকার জন্য আমার ক্যামেরা আটকে রেখেছেন। তখন আমি কিছু টাকা দিয়ে ক্যামেরা ছুটিয়ে আনি। এখন আমার কাছে শুটিংয়ে ফুটেজ আছে। টাকা না দিলে আমি এডিটিং করতে দেব না।’
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবির অন্যতম প্রযোজক ধীমান বড়ুয়াকে ফোন দেওয়া হলেও, তা বন্ধ পাওয়া যায়।