‘আমাকে ফেলে চলে গেল মিজু’
আহম্মেদ ইলিয়াস ভূঁইয়া পরিচালিত ‘মানুষ কেন অমানুষ’ ছবির শুটিং করার জন্য গতকাল রাত ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে করে দিনাজপুরের উদ্দেশে রওনা হন মিজু আহমেদ। সামান্য সময়ের জন্য ট্রেনটি ধরতে পারেননি কাজী হায়াৎ। তিনিই প্রথম মৃত্যুর খবরটি পান। এ বিষয়ে কাজী হায়াৎ এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
কাজী হায়াৎ বলেন, ‘একই ট্রেনে আমারও দিনাজপুর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি স্টেশনে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি করে ফেলি। ৮টার ট্রেন চলে যায়। আমি তো দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ট্রেন চলে যাচ্ছে, তখনই মিজু আমাকে ফোন করে বলে, ‘আমি তো চলে গেলাম, তুমি ট্রেন ফেল করেছ। আমি মন খারাপ করে হেঁটে বাইরে আসি, ড্রাইভারকে ফোন করে বলি আবার স্টেশনে আসতে। ঠিক ৮টা ৫ মিনিটে আমার কাছে মিজুর নাম্বার থেকে ফোন আসে, অন্য কোনো অপরিচিত গলা, আমার কাছে জানতে চায় আমি মিজুর কী হই। আমি তাকে বললাম আমি মিজুর ভাই হই। তখন তিনি আমাকে বলেন যে মিজু স্ট্রোক করেছে, এখন ট্রেন তেজগাঁও পার হচ্ছে। বিমানবন্দর স্টেশনে কেউ কি রিসিভ করতে পারবে? আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে উনাকে বললাম যে আমি লোক পাঠাচ্ছি।’
এর পরের ঘটনা নিয়ে কাজী হায়াৎ বলেন, “তারপর আমি সবাইকে ফোন দিচ্ছিলাম, কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। দুবার ওয়েটিংয়ে পাবার পর মিশা সওদাগরকে পাওয়া গেল। তখন আমি তাঁকে বিমানবন্দর স্টেশনে যেতে বললাম। মিশা উত্তরায় ছিল, সে ছুটে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার মিশা ফোন করে বলল, ‘ভাই মিজু ভাইকে আমি রিসিভ করেছি, কিন্তু মিজু ভাই তো আর নেই!’ আমি তখনই ছুটে গেলাম, এরই মধ্যে সবার কুর্মিটোলা হাসপাতালে জড়ো হওয়া শুরু হয়েছে।”
মিজু আহমেদের স্মৃতি নিয়ে কাজী হায়াৎ বলেন, “আমি যখন ‘দাঙ্গা’ ছবিটি নির্মাণ করছিলাম তখন মিজুর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়, এর আগে দেখেছি কিন্তু পরিচয় ছিল না। আমি আমার এক বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে প্রযোজনা করছিলাম ছবিটি, আমার বন্ধুই মিজুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি তখনই জানতে পারি মিজু শিক্ষিত ছেলে, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেছে। তখনই আমি তাকে ছবিতে যুক্ত করি।”
কাজি হায়াৎ যোগ করেন, “এই ছবিতে মিজু খুবই ভালো অভিনয় করে, ছবিতে আমি তাকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম, কিন্তু ছবি মুক্তি পাওয়ার পর মিজু একেক ছবিতে ৫০ হাজার টাকা নিতে থাকে। তারপর মিজুকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার প্রায় ৩০টা ছবিতে সে অভিনয় করেছে। তবে আমার মাঝে বেশ কয়েকটি ছবিতে মিজুর কোনো চরিত্র ছিল না। তখন সে আমাকে বলেছিল, ‘পেটের দায়ে তো কিছু কাজ করিই, কিন্তু কিছু কাজ করতে চাই মনের ক্ষুধা মেটাতে চাই। তুমি আমাকে টাকা যেমনই দেও, তোমার ছবিতে কাজ অবশ্যই দেবে। না হলে মনের ক্ষুধা মেটে না।’”
তেজগাঁও স্টেশনে যাওয়ার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন মিজু আহমেদ। পরে তাঁকে বিমানবন্দর স্টেশনে নামানোর পর কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মিজু আহমেদকে কুষ্টিয়ার কোটবাড়ীতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।