আমাকেই আমার প্রতিযোগী মনে করি : প্রিয়াংকা
টালিগঞ্জের চলচ্চিত্রে প্রিয়াংকা সরকার এরই মধ্যে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন। অভিনয় করেছেন বেশকিছু ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে। এবার তিনি নাম লিখিয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। রফিক শিকদার পরিচালিত ‘হৃদয়জুড়ে’ শিরোনামের চলচ্চিত্রটিতে এরইমধ্যে কয়েকদিন শুটিং করেছেন তিনি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে।
প্রথমে জানতে চাইব বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে।
প্রিয়াংকা সরকার : ভীষণ ভালো লাগছে। মনেই হচ্ছে না যে কলকাতার বাইরে আছি। পরিচালক, টেকনিশিয়ান, ডিওপি সবাইকে একই রকম লাগছে।
এর মধ্যে কিছুই কি ভিন্ন লাগছে না?
প্রিয়াংকা সরকার : ভাষাটা নিয়ে একটু সমস্যায় আছি। যদিও সমস্যা বললে ভুল হবে। নতুন অভিজ্ঞতা বলতে পারেন। এখানে আমাকে ‘হ্যাঁ’ এবং ‘জি’ শব্দটা নিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। ধরুন কলকাতায় ভাষায় বাবা বললেন, কিরে কেমন আছিস? আমি উত্তরে বললাম, হ্যাঁ বাবা ভালো আছি। কিন্তু এখানে সেটা ‘হ্যাঁ’ এর বদলে ‘জি’ বলতে হচ্ছে। এমন টুকটাক ব্যাপার রয়েছে। তা ছাড়া এখানে আমাকে প্রচুর আপু ডাক শুনতে হচ্ছে। খুব মজা লাগছে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে এসব কিছু খুব ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছি।
কাজের পেশাদারত্বের ক্ষেত্রে দুই দেশের ভেতর কোনো পার্থক্য দেখেন?
প্রিয়াংকা সরকার : একদমই না। পেশাদারত্বের দিক থেকে বলতে গেলে দুই দেশেই সমান। পার্থক্য গড়ে দেয় এমন কোনো কিছু এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি।
আপনার টালিগঞ্জে শুরুটা হয়েছিল বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র দিয়ে। একটা সময় পর আপনাকে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে দেখা যায়নি। বিষয়ভিত্তিক চলচ্চিত্রে বেশি দেখা গেছে। এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
প্রিয়াংকা সরকার : আমার কাছে বাণিজ্যিক বা বিষয়ভিত্তিক চলচ্চিত্র বলে কিছু নেই। আমি মনে করি সব চলচ্চিত্র এক। যদিও এখন চলচ্চিত্রকে দুটো ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে যদি বলি তাহলে বলব, আমি তো একজন অভিনেত্রী তাই অভিনয়ের ক্ষুধাটা একটু বেশি। বিষয়ভিত্তিক চলচ্চিত্রে আমি যে অভিনয়ের সুযোগটা পাই সেটা কমার্শিয়াল চলচ্চিত্রে পাই না। আর সে কারণে আমি সৃজিত মুখার্জি, বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায়সহ অনেকের চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি।
আবারও কি পুরোদমে বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে ফেরার ইচ্ছে আছে?
প্রিয়াংকা সরকার : ভালো প্রোজেক্ট পেলে অবশ্যই বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করব। এটা নিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবিনি।
আপনার জনপ্রিয় একটি চলচ্চিত্র ছিল ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’। ব্যবসা সফল হয় চলচ্চিত্রটি। পরে দ্বিতীয় কিস্তি নির্মাণ হয়। সেখানে আপনাকে এবং রাহুলকে নেওয়া হয়নি। নিজের ভেতরে কি কোনো রকম খারাপ লাগা কাজ করেছে?
প্রিয়াংকা সরকার : দ্বিতীয় কিস্তিতে কিন্তু প্রথমটার সঙ্গে কোনো রকম মিল ছিল না। সেখানে পল্লবী এবং কৃষ্ণের ভবিষ্যৎ দেখানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা দেখানো হয়নি। এখানে দেখানো হয়েছে কম বয়সী বাচ্চা ছেলেমেয়ের গল্প। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে এটাকে সিক্যুয়াল হিসেবে মুক্তি না দেওয়া উচিত ছিল। আর খারাপ লাগার কথা বলতে গেলে বলব, খারাপ লাগেনি। তবে রাহুল আর আমি একসঙ্গে আবার কাজ করতে পারলে ভালো লাগত।
রাহুল প্রসঙ্গ যেহেতু চলে এলো সেহেতু রাহুলের সঙ্গে আপনার বর্তমান সম্পর্কের কথা জানতে চাই।
প্রিয়াংকা সরকার : আমরা এখন হাজবেন্ড-ওয়াইফ হিসেবে নেই। আলাদা থাকছি। সহজ (প্রিয়াংকার ছেলে) আমার সঙ্গে থাকে। তবে যখন আমি বাইরে থাকি তখন রাহুলের কাছে থাকে। ওই দেখাশোনা করে।
তাহলে আপনাদের দুজনের সম্পর্কের সংজ্ঞাটা কী হবে এখন?
প্রিয়াংকা সরকার : আমরা এখন কেবলই বন্ধু। আমরা চাই এই বন্ধুত্বটা থাকুক। অন্তত আমাদের সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য এটা থাকা উচিত।
দুজনের সম্পর্কের এই দূরত্ব তৈরির জন্য কাকে দায়ী করেন?
প্রিয়াংকা সরকার : কাউকে না। আমাদের মনে হয়েছে আমাদের একসঙ্গে জীবন কন্টিনিউ করা সম্ভব নয়। তাই সেপারেশনের চিন্তা করেছি।
আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসি। আপনি এর আগেও তো যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন?
প্রিয়াংকা সরকার : করেছিলাম। কিন্তু সেটি পরে আর মুক্তি পায়নি। শুটিং হওয়ার কথা ছিল ইন্ডিয়াতে। বলতে পারেন সেটা ছিল অসপাপ্ত একটি উদ্যোগ। আমি যত দূর জানি কাজটা শেষ হয়নি।
বর্তমানে দুই বাংলা একসঙ্গে যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে। এই যৌথ উদ্যোগকে কীভাবে দেখছেন?
প্রিয়াংকা সরকার : উদ্যোগ যদি সাকসেসফুল হয় তাহলে বলব ইতিবাচক। কারণ দেখুন আমাদের ভাষা কিন্তু এক। সুতরাং এখানে একটা বড় বাজার সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ আছে। অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে দুই দেশের শিল্পীদের মধ্যে।
টালিগঞ্জে তো বাংলাদেশের কয়েকজন নায়িকা অভিনয় করছেন। তাদের কি আপনার কাছে প্রতিযোগী মনে হয়?
প্রিয়াংকা সরকার : এটা ভাবাটা বোকামি হবে। তাদের প্রতিযোগী ভাবা মানে সময় নষ্ট করা। কারণ পরিচালক প্রযোজক চরিত্রের প্রয়োজনে যাকে মনে হবে তাকেই নেবে। সেক্ষেত্রে আমি আমাকেই আমার প্রতিযোগী মনে করি। কারণ আমার ভেতর তাড়না থাকে যে প্রতিটা কাজ আগের কাজ থেকে ভালো করতে হবে।
সাধারণ একটি প্রশ্ন দিয়ে শেষ করব। বাংলাদেশের খাবার কেমন লাগছে?
প্রিয়াংকা সরকার : আমি এখানে আসার আগে শুনেছিলাম বাংলাদেশের লাঞ্চে অনেক রকম খাবার থাকে। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতেও থাকে। তবে এখানে লাঞ্চে পাঁচ ছয় রকম খাবার থাকে। শুনেছি আউটডোরে আরো বেশি আইটেম থাকে। আমি খেতে খুব ভালোবাসি। সেভাবেই খাচ্ছি। কালাভুনা খাবারটি খেয়েছি। ভালো লেগেছে। আরো তো বেশ কিছুদিন আছি। আরো ভিন্ন ধরনের খাবারের স্বাদ নিয়ে দেশে ফিরব।