ঢাকায় 'ভুবন মাঝি' ছবির প্রিমিয়ারে অংশ নিয়েছিলেন কিছুদিন আগেই, দিনটি ছিল পয়লা মার্চ। ঢাকায় ছিলেন একদিনের একটু বেশি, এর মধ্যেই ছুটেছেন টিভি স্টেশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে, ছবির প্রচারের জন্য। 'ভুবন মাঝি' ছিল তাঁর প্রথম ছবি, যেখানে তিনি কাজ করেছিলেন প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে। 

ঢাকা ছাড়েন ২ মার্চ। ঢাকার স্মৃতিতে প্রলেপ পড়তে না পড়তেই প্রয়াত হলেন কালিকাপ্রসাদ। 'ভুবন মাঝি'র পরিচালক ফাখরুল আরেফীন প্রয়াণ সংবাদ পেয়ে বলছিলেন, “গেল রাতেও মেসেঞ্জারে কথা হলো। জানতে চেয়েছেন, ছবি কেমন চলছে? 'ভুবন মাঝি' ছবির কোনো শিল্পীর সম্মানী বাকি নেই। খালি কালিকাদার সম্মানীটাই জোর করেও দিতে পারলাম না। ছবির সংগীত তৈরির ১৬টি দিন তাঁর সঙ্গে কাটিয়েছিলাম স্বর্গের অনুভব নিয়ে। খবরটাতে সব এলোমেলো লাগছে।”

ঢাকায় ছবির প্রিমিয়ারে ছিলেন সংস্কৃতিজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। সেই রাতে কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে তাঁর কেটেছিল অনেকটুকু সময়।

'কত পরিকল্পনা, কত আয়োজন—সব ভেস্তে গেল আমাদের। নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের পর আমি কাউকে খুঁজে পেয়েছিলাম, যাঁর সংগীত প্রজ্ঞা মুগ্ধ হওয়ার মতো।

তিনি আমাদেরই লোক ছিল। তাই তো গান বেঁধেছিলেন শাহবাগ নিয়ে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ভাষার প্রতি তাঁর বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা অগাধ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার উত্থান দেখে যখন বিচলিত বোধ করেছি, কালিকা তখন প্রবোধ দিয়েছে। বলেছে, দেখো বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। এই হচ্ছে কালিকাপ্রসাদ। যিনি নিজেকে সব সময় বাঙালি ভেবেছেন।’

ঢাকায় শাহবাগ আন্দোলনে তাঁর সংযুক্তি ছিল তাঁর লেখা গান 'শাহবাগ দিচ্ছে ডাক'। গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার সেই স্মৃতি মনে করে বলছিলেন, 'দুই বাংলাকে সমানভাবে ধারণ করতেন কালিকাপ্রসাদ। কাঁটাতারের বেড়া মানত না তাঁর বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা। সকল অচলায়তনে তিনি পাশে থাকতেন আমাদের।
যেমন ছিলেন সুর ছড়িয়ে শাহবাগে।' 

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী সে কথাই বলছিলেন, 'প্রাণে তাঁর শাহবাগ জেগেছিল বলেই তাঁর গান এসেছিল। কালিকা আমাদের স্বজন। তিনি আমাদের রাজপথের সাথি।'

বাংলা অঞ্চলের সব ভাষার গান নিয়েই তাঁর গবেষণা ছিল। বাংলা গানের প্রতি তাঁর প্রিয়তা কারো সঙ্গে তুলনীয় নয়। বলছেন ঢাকার জনপ্রিয় গানের দল 'জলের গানে'র কনক আদিত্য। 

গেল ৩০ ডিসেম্বরে জি বাংলার সারেগামাপা’র স্টুডিওতে কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা মনে করে কনক বলছেন, 'তাঁর সঙ্গে কত কথাই বলেছি গান নিয়ে। বাংলা গান নিয়ে তাঁর গবেষণা নিয়ে। অপূর্ণ থেকে গেল সব।'

গতকাল ৭ মার্চ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান সকলের প্রিয় শিল্পী কালিকাপ্রসাদ। তবে তাঁর গাওয়া গান প্রাণ হারায়নি। আমাদের সকলের প্রাণেই তা বেজে চলেছে।