শ্রদ্ধায় নায়করাজের জহির রায়হানকে স্মরণ
‘তিনি প্রত্যেকটা ছবি শুরুর আগে সবাইকে নিয়ে বসতেন। সবার মতামত নিতেন। আমরা যখন ছবিটা শুরু করলাম, তার আগে তিনি সবাইকে নিয়ে বাসায় নিয়ে বসেছিলেন। সবার সাথে কথা বললেন। তার পর একদিন শুটিং শুরু হলো।’ আজ বিএফডিসিতে জহির রায়হান কালার ল্যাব অডিটরিয়ামে ‘জীবন থেকে নেয়া ও জহির রায়হান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এভাবেই বললেন নায়করাজ রাজ্জাক।
নায়করাজ আরো বলেন, ‘আমরা ছবির শুটিং করছি, একদিন শুটিংয়ে আর্মি এলো, জহির রায়হান সাহেবকে তুলে নিয়ে গেল, সাথে আমাকেও তুলে নিল। সেখানে আমি দেখেছি জহির রায়হান সাহেবের সাহস। তিনি ক্যান্টনমেন্টে বসে তাদের চ্যালেঞ্জ করলেন এই বলে যে আর্মি ছবি বন্ধ করতে পারে না। সেটার জন্য সেন্সর বোর্ড আছে।
তারপর একসময় আমাদের ছেড়ে দেওয়া হলো। এফডিসিতে শুটিং বন্ধ করার হুকুম এলো, কিন্তু তখনকার এমডি সাদেকুর রহমান সাহেব তা হতে দিলেন না, কারণ এফডিসি শুটিং বন্ধ করতে পারে না, সমস্যা থাকলে সেন্সর বোর্ড আটকে দেবে। একসময় ছবি সেন্সরে জমা দেওয়া হলো, আটকা পড়ল, তারপর আবার অনুমতি দিল, আবার ব্যান করল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার দলিল হিসেবে ঠিকই স্থান করে নিল এই ছবিটি।’
বর্তমানে বিএফডিসির পরিবেশ নিয়ে নায়করাজ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘একসময় একুশে ফেব্রুয়ারিতে সবাই খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে যেতেন। এখন একুশে ফেব্রুয়ারি আছে, কিন্তু খালি পায়ে প্রভাতফেরি নেই। এই দিনে এফডিসি পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হতো। শুধু এমন বিশেষ দিনেই নয়, প্রতিদিন সকাল দশটার আগে সব পরিষ্কার করা হতো, তখনকার এমডি নিজে গিয়ে প্রতিটি ফ্লোর দেখতেন। এখনকার এমডির কাছে জানতে চাই, তিনি তো বেতন পান। সুইপারদের কী বেতন দেন না? এগুলো বলছি আবেগ থেকে, কারণ আমি একজন এক্সট্রা আর্টিস্ট থেকে নায়করাজ হয়েছি। এসব দেখলে দুঃখ হয়। চলচ্চিত্রে সুদিন আসবে যদি আবারও সেই দিন আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি। সেই ১৯৬৮-এর এফডিসি যদি আমরা ফিরিয়ে আনতে পারি, তাহলে আবারও আরেকটি জহির রায়হানের জন্ম হবে।’
‘জীবন থেকে নেয়া ও জহির রায়হান’ শিরোনামের এই আলোচনা সভা শুরু হয় বেলা ১১টায়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
আলোচকদের মধ্যে নায়করাজ রাজ্জাক ছাড়াও ছিলেন আমজাদ হোসেন, সুচন্দা, হাসান ইমাম, আফজাল হোসেন প্রমুখ।