বিজ্ঞাপনী সংস্থা রামপালের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে
বিজ্ঞাপনী সংস্থা নিয়োগ দিয়ে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে প্রচারণা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আজ রোববার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যবিষয়ক সংগঠন ‘চিরকুট’ আয়োজিত এক সভায় এ দাবি করেন আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘রামপালের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। এটা আমি রূপক অর্থে বলছি না। আসলেই একটা বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে। কনসালটেন্সি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারাই বিভিন্ন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে।’
বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড’।
প্রকল্পে সহায়তা করছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের জন্য ৪৩০ একর ভূমি উন্নয়নকাজ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া চলছে প্রাথমিক অবকাঠামোর কাজ।
পরিবেশের ক্ষতি ও সুন্দরবনের সম্ভাব্য নানা বিপর্যয় তুলে ধরে বিভিন্ন সংগঠন রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের বিরোধিতা করছে। বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘বলা হয় আমরা সবকিছুতেই বাধা দেই। আমরা ফুলবাড়ীতে বাধা দেই, টিকফাতে বাধা দেই, গ্যাস রপ্তানিতে বাধা দেই, গ্যাস চুক্তিতে বাধা দেই। আমরা তো মনে করি, আরো শক্তিশালীভাবে বিরোধিতা করা দরকার ছিল। আমরা গ্যাস রপ্তানির বিরোধিতা করেছিলাম। তখন যারা রপ্তানির পক্ষে ছিল, তারা বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে প্রচারণা চালিয়েছিল- বাংলাদেশ নাকি গ্যাসের ওপর ভাসছে। রপ্তানি না করলে সমস্যা হবে। তারাই এখন বলছে, গ্যাস শেষ। অথচ আমরা তখনই বলেছিলাম, আমাদের গ্যাস সীমিত। তারা তখন গ্যাস রপ্তানি করতে পারেনি বলেই আজ বাংলাদেশে বাতি জ্বলছে।’
বিএনপির রামপালবিরোধী আন্দোলনে সমর্থনের ব্যাপারে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা যখন ফুলবাড়ী আন্দোলন করলাম তখন জামায়াত-বিএনপি সরকারে। আর বিরোধী দল আওয়ামী লীগ আমাদের সমর্থন জানিয়েছিল। এখন বিএনপি সমর্থন জানাচ্ছে। জনগণের আন্দোলন যখন বড় আকার ধারণ করে, তখন বিরোধী দল আসে সমর্থন নিয়ে।’
‘আমাদের আন্দোলনের টাকা কোথা থেকে আসে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সরকারি দল ও বিএনপি, দল চালানোর জন্য কোথা থেকে এত কোটি কোটি টাকা পায় সেটাও আমার প্রশ্ন। আমাদের আন্দোলন চলে জনগণের অংশগ্রহণে, পৃষ্ঠপোষকতায়।’
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব বলেন, ভারত বিরোধিতার বিষয়টি নিয়ে এসে আন্দোলনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারতের বহু লোক, বহু বিশেষজ্ঞ এ প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন।
সুন্দরবন শুধু গৌরব কিংবা ঐতিহ্যের বিষয় নয় উল্লেখ করে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এটা আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। এটা প্রাকৃতিক সুরক্ষা বাঁধ। সুন্দরবন যেহেতু মানুষকে রক্ষা করছে, তাই মানুষের দায়িত্ব সুন্দরবনকে রক্ষা করা।’
কয়লা আমদানি সম্পর্কে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আপনারা কয়লা আমদানি করছেন, এর বদলে গ্যাস আমদানি করুন। বঙ্গোপসাগরে আমাদের যে গ্যাস আছে সেটা নিয়ে যদি বিদেশিদের সঙ্গে দুর্নীতিমূলক চুক্তি না করা হয়, তাহলে তা দিয়েই আগামী কয়েক দশক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে।’
‘বলা হয় আমরা উন্নয়নের বিরোধিতা করছি। আমাদের আন্দোলন বাংলাদেশের সম্পদ যেন শতভাগ দেশের কাজে ব্যবহার হয় সেজন্য। আমরা সেটাকেই উন্নয়ন বলি, যেটা মানুষ ও পরিবেশকে বিকশিত করে। যেটা মানুষ ও পরিবেশের জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসে সেটা উন্নয়ন হতে পারে না।’
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প না করে সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, ও বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনেরও প্রস্তাব করেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহর এখন আবর্জনার শহর। এ আবর্জনা থেকেই আমরা অনেক বিদ্যুৎ ও গ্যাস পেতে পারি। সৌরশক্তি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশ এখন নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে। ভারত নিজেই আগামী ছয় বছরে এক লাখ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছে।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন। এতে সভাপতিত্ব করেন চিরকুট সম্পাদক আনজুম সানি। বিকেল সাড়ে ৪টায় সভাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।