অভিযুক্তদের বাঁচাতে তৎপর ছাত্রলীগের একাংশ
সাংবাদিককে মারধর করার সঙ্গে জড়িতদের বাঁচাতে তৎপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্রলীগের একাংশ। গত ৮ জুন মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিডিনিউজ প্রতিনিধি শফিকুল ইসলাম। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার ছাত্রলীগের তিন নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অভিযোগ উঠেছে, সাজা পাওয়া নেতাকর্মীদের বাঁচাতে তদবির শুরু করেছে ছাত্রলীগেরই একাংশ। এদিকে মারধরের ঘটনায় ১৫ জন জড়িত থাকলেও মাত্র তিনজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা।
সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো, সহসম্পাদক ইকরাম উদ্দিন অমি ও ছাত্রলীগকর্মী ইকরাম নাহিদকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। গতকাল সোমবার উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সভাপতিত্বে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ঘটনায় অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে অভিযুক্তদের বাঁচাতে তদবির শুরু করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের উপসমাজসেবা সম্পাদক বশিরুল হকের বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের এ নেতার বিরুদ্ধে শিক্ষক লাঞ্ছনা, নিজ দলের মধ্যে সংঘর্ষ ও ফাও খাওয়াসহ নানা অভিযোগ আছে। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাঁকে সাময়িক বহিষ্কারও করেছিল।
সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় তিন নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়ার পর এ বিষয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছেন ছাত্রলীগ নেতা বশিরুল হক।
তবে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টার কথা অস্বীকার করে বশিরুল বলেন, ‘ঘটনায় যারাই জড়িত তদন্তসাপেক্ষে তাদের শাস্তি হোক এটা আমিও চাই। কিন্তু তদন্ত ছাড়া প্রশাসন কীভাবে তিনজনকে বহিষ্কার করল আমি সে বিষয়টাই জানতে গিয়েছি।’
চূড়ান্ত তদন্ত ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে কাউকে বহিষ্কার করতে পারে এ বিষয়টি বশিরুলকে জানালে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টা জানতাম না।’
প্রাথমিক তদন্তে ১৫ নাম
জানা যায়, প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার ব্যাপারে ছাত্রলীগের ১৫ জনের নাম উঠে এসেছে। তাঁরা হলেন শাখা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মহিতোষ রায় টিটো (ইতিহাস), সহসম্পাদক ইকরামুদ্দিন অমি (মার্কেটিং), ছাত্রলীগকর্মী সুব্রত কুমার সাহা (পরিসংখ্যান), অভিজিৎ নন্দী (আই আইটি), বায়েজীদ (উদ্ভিদবিজ্ঞান), সিফাত আহমেদ রাতুল (বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং), প্রিতম আরিফ (ইতিহাস), বিপ্লব হোসেন (উদ্ভিদবিজ্ঞান), আজমুস্নাহান নওরোজ প্রণয় (ভূগোল ও পরিবেশ), ইকরাম নাহিদ (পরিসংখ্যান), আল-আমিন (ভূগোল ও পরিবেশ), তপু সুলতান (ইতিহাস), আবদুল্লাহ আল ফারুকী ইমরান (ইতিহাস), ফাহাদ (ইতিহাস) এবং রবিন সরকার (পরিসংখ্যান)। এরা সবাই মীর মশাররফ হোসেন হলের শিক্ষার্থী।
এ ব্যাপারে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি রাজিব আহমেদ রাসেল বলেন, ‘সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় যারা জড়িত ছিল, তাঁদের কোনো দায়ভার শাখা ছাত্রলীগ নেবে না। মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবেই আমরা একজনকে বহিষ্কার করেছি। এ ছাড়া এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো সহযোগিতা চাইলেও শাখা ছাত্রলীগ তা করতে প্রস্তুত আছে।’
এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ‘ব্যক্তিগত অপরাধের দায় সংগঠন নেবে না। যারা উপাচার্যের বাসভবনে গেছে তারা আমাদের না জানিয়ে গেছে। ছাত্রলীগের পরিচয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে তাদেরকে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক সৈয়দ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘তদন্ত কমিটির বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে অনুষ্ঠানিকভাবে এখনো চিঠি পাইনি। আশা করছি আগামীকালই চিঠি পাব। চিঠি পেলেই কাজ শুরু করে দেওয়া হবে।’
গত ৮ জুন রাতে এক তরুণীকে অপহরণকারীদের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় সাংবাদিক শফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ ওঠে, মারধরকারীরা মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্র।