শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করছে ডিইউআরএস
২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর ‘রিসার্চ ফর এ বেটার ওয়ার্ল্ড’ স্লোগান নিয়ে ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটি (ডিইউআরএস) প্রতিষ্ঠা করেন ইতিহাস বিভাগের গবেষক সাইফুল্লাহ সাদেক। সাংবাদিকতা ও টিএসসিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার সুবাদে রিসার্চ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ জাগে তাঁর মধ্যে।
সাইফুল্লাহ সাদেক বলেন, ‘একমাত্র গবেষণা পারে একটি সুন্দর সমাজ বিনির্মাণ করতে, একটি সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণ করতে।’ টেকসই উন্নয়নসহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণার বিকল্প নেই বলে জানান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি করা, জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেওয়া, একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এবং ডিইউআরএস সেই লক্ষ্যে কাজ করছে বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সোসাইটি। আমেরিকার হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সংগঠন আছে, যেখানে আন্ডার গ্রাজুয়েটরা গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। আর দেশে ডিইউআরএস-ই শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণার সর্বপ্রথম বড় মাপের প্ল্যাটফর্ম।
প্রায় আড়াই বছরের চিন্তার ফল হিসেবে তৎকালীন উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের অনুমতিক্রমে এবং বিভিন্ন বিভাগের গবেষণামনস্ক প্রায় ৩৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ক্যারিয়ারকে ফোকাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সিরাজুল ইসলাস লেকচার’ হলে ‘এ ক্যান্ডিড জার্নি টু রিসার্চ’ প্রোগ্রামের আয়োজন করে ডিইউআরএস। ‘গবেষণার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল ক্যারিয়ার আছে’—মূল ভাবকে নিয়ে তাঁরা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেন। আবার সরকারের উদ্যোগে এটুআই প্রকল্পের সহায়তায় তরুণদের গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে তাঁরা কাজ করেন। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান, অর্থনীতি ও সংবাদমাধ্যম বিষয়ে গবেষণা কেমন হতে পার সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
চলতি বছর মার্চ মাসে গবেষণার জন্য সদস্য আহ্বান করেন, যেখানে ব্যাপক সাড়া পড়ে। প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থী সদস্যের জন্য আবেদন করেন, ৪৭০ জনকে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত করা হয়। গবেষণা সংসদ প্রতি সপ্তাহে সদস্যদের জন্য ফ্রি ওয়ার্কশপ আয়োজন করে।
সংগঠনের ১৮টি দল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ইস্যুর ওপর ১৮টি প্রস্তাব নিয়ে পুরোদমে গবেষণার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পরস্পর গবেষণামূলক বিতর্কে অংশ নিচ্ছে। টিএসসির সবুজ ঘাসে কিংবা কোনো শ্রেণিকক্ষে বা কোনো গবেষণা কেন্দ্রে বসে তারা কাজ করছে। তাদের জন্য টিএসসিতে নিদিষ্ট কোনো শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দ নেই।
এনটিভি অনলাইকে সভাপতি বলেন, ‘ শুরু থেকে সদস্যরা নিজেরা অর্থ দিয়ে সংগঠন ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করেন। পরে ২০১৭-১৮ বছরের অর্থ বাজেটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গবেষণা সংসদকে বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে। বাজেট বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ। গবেষণার জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সরকার তরুণদের এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আরো বেশি সহায়তা দেবে বলে আশা করি।’
এই সংগঠনের অধীনে ৩৩ সদস্যের একটি কার্যকরী পরিষদ, দুটি কেন্দ্রীয় দল, বিষয়ভিত্তিক ১৮টি গবেষণা দল রয়েছে। এ ছাড়া দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একই ধরনের গবেষণা সংসদ, কলেজ ও স্কুলে গবেষণা ক্লাব প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করে গবেষণাকর্ম পরিচালনায় এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (কারাস), এক্সেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) টিম অ্যাসোসিয়েটস, ম্যাগনাম কনসালটেন্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গবেষণার কাজ করেছে।
এ সংগঠনের তরুণ গবেষকদের দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। শিল্পকলা একাডেমি দেশের শিল্পকলা চর্চা নিয়ে গবেষণা করার জন্য গবেষণা সংসদকে প্রস্তাব করে। এ ছাড়া গবেষণা সংসদের কয়েকজন সদস্য বিবিসির মিডিয়া অ্যাকশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গবেষণা কেন্দ্রে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যার বিষয় যেমন প্রাইমারি হেলথ কেয়ার, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সিকিউরিটি, বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সার্বজনীনতা, ক্যাম্পাসের স্ট্রিট ফুড, ক্যাম্পাসে শব্দদূষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে গবেষণা করছে তারা। গবেষণাপ্রাপ্ত ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রেরণ করে তার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে আহ্বান জানাবেন। টিএসসির ইতিহাস, সংস্কৃতিচর্চা এই বিষয় নিয়েও ডিইউআরএস গবেষণা করবে।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক শহীদ আকতার হোসেনের মতো জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অনেকে সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন এবং সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলেন উপাচার্য।
গবেষণার ১৮টি দলের প্রতিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক, সুপারভাইজার হিসেবে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করছেন। এ ছাড়া সাবেক ছাত্রদের মধ্যে যাঁরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাকাজে আছেন, তাঁরা সহযোগিতা করছেন।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মকছুদুল করিম সোহেল বলেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে অভাববোধ থেকেই এই সোসাইটিটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জ্ঞানবিনিময় এর মূল উদ্দেশ্য। আগামী ৭ ডিসেম্বর সংগঠনটি প্রথম বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান করবে।