বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে চক্রান্ত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক রাকসু ভিপি ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিগুলোর মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিগুলো ঢুকে যাচ্ছে। স্বাধীনতার স্বপক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অপশক্তিদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) রিপোর্টার্স ইউনিটির ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এসব কথা বলেন।

সাবেক এই রাকসু নেতা আরো বলেন, ‘গণমাধ্যমের কাজ হবে বস্তুনিষ্ঠভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারায় সাংবাদিকতা করা। বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িকতার ধারা অব্যাহত রাখতে সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।’

পরে দুপুরে ‘জাতীয় নেতা শহীদ কামারুজ্জামান ও রাজশাহীর গণমাধ্যম’ শীর্ষক আলোচনা সভা শুরু হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন মিশ্র।

আলোচনা সভা শেষের অংশে ছিল অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সম্মাননা প্রদান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক।

নিজের বক্তব্যে সুন্দরবন নিয়ে কথা বলেন হাসান আজিজুল হক। তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র যদি কোনো রকমে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়, তবে অন্যত্র স্থানান্তর করা উচিত হবে। কোনো ধরনের ঝুঁকির মধ্যে যাওয়া শুভ হবে না।’

হাসান আজিজুল হক আরো বলেন, ‘সুন্দরবন আমাদের বাঁচাচ্ছে, সুন্দরবনকে আমাদেরও বাঁচাতে হবে। এই বন আমাদের প্রকৃতি রক্ষার ঢাল। এ বিশাল ম্যানগ্রোভ যদি না থাকে, আমাদের এখানে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস আঘাত হানবে। এ জন্য সুন্দরবন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। রামপালে যে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হচ্ছে তাতে বিরোধিতা রয়েছে। আমি এখনো নিশ্চিত নই, যদি এটা এখানে করা হয়, তবে একটা সর্বনাশ হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সরকার আবার দাবি করছে, এত দূর থেকে কিছু হবে না। এখন এ জিনিসটা জানি না শেষ পর্যন্ত কী হবে? তবে আমার নিজের পরামর্শ হলো, এটা সুন্দরবন থেকে দূরে করা হোক।’

রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মেহেরুল ইসলাম সুজনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে, সহযোগী অধ্যাপক মশিহুর রহমান।

পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হাসান আজিজুল হক ও যমুনা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি মোহসীন-উল হাকিমকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া মোহসীন-উল হাকিমকে রিপোর্টার্স ইউনিটির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করেন হাসান আজিজুল হক। 

এর আগে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ভবনে অবস্থিত সংগঠনটির নিজ কার্যালয়ে কেক কেটে ও ফেস্টুন উড়িয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা। পরে সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রভাষ কুমার কর্মকার, সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মো.মিজানুর রহমানসহ রিপোর্টার্স ইউনিটির বর্তমান ও সাবেক সদস্যরা।

এ ছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে পুনর্মিলনী ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।