রাবি শিক্ষিকার জালিয়াতির থিসিস প্রত্যাহার, দায়মুক্তি
জালিয়াতি করা গবেষণাপত্র প্রত্যাহার করে দায়মুক্তি পেয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলা ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভীন। নিজ ছাত্রের গবেষণাকর্ম চুরি-জালিয়াতি করে নিজ নামে চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হলেও মানবিক কারণে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল।
গত ২২ আগস্ট রাতে একাডেমিক কাউন্সিলে ওই শিক্ষিকার সিন্ডিকেট অনুমোদিত গবেষণাপত্র শুধু বাতিল করে অভিযোগটি চূড়ান্তভাবে বাদ দেওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এ তথ্য জানান।
একাডেমিক কাউন্সিল সূত্র জানায়, ২০১২ সালের জুলাইয়ে সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভীনের ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : ঐতিহ্য ও আধুনিকতা, শিরোনামে পিএইচডি থিসিস অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। ঘটনার প্রায় তিন বছর পর ২০১৫ সালে চারুকলা অনুষদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা আজাদী পারভীনের থিসিস জালিয়াতির বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ তোলে। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর ২০০৯ সালের অক্টোবরে ‘বাংলাদেশের কারুশিল্প : একটি নৃ-তাত্ত্বিক সীমক্ষা’ শিরোনামে সিন্ডিকেটে অনুমোদন হওয়া পিএইচডি থিসিসের সঙ্গে প্রায় ৯০ শতাংশ হুবহু মিল পাওয়া যায় আজাদী পারভীনের পিএইচডি থিসিসের সঙ্গে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হয়। পরে সমালোচনার মুখে এবং শাস্তি থেকে নিজেকে বাঁচাতে শিক্ষিকা আজাদী পারভীন নিজেই তাঁর থিসিস পেপার প্রত্যাহারের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন করেন।
পরে থিসিস জালিয়াতির অভিযোগটি তদন্তে একটি কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। চলতি বছরের মার্চে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদনে জালিয়াতির বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে রিপোর্ট করে। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটি নিয়ম অনুযায়ী অভিযুক্ত সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভীনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশও করে। তবে একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তা এড়িয়ে অভিযুক্তের শারীরিক ‘অসুস্থতা’ বিবেচনা করে শুধু থিসিস পেপার প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
তদন্ত কমিটির সদস্য ও বিজ্ঞান অনুষদের বর্তমান ডিন অধ্যাপক ড. আখতার ফারুক বলেন, ‘সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভীনের বিরুদ্ধে ওঠা জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি আরেক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর গবেষণাকর্ম চুরি করে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজে ডিগ্রি নিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করেছি।’
জানতে চাইলে রাবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘অভিযোগটির তদন্ত চলাকালে আজাদী পারভীন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন, এখনো পুরোপুরি সুস্থ নন। ফলে তাঁর প্রতি মানবিক বিবেচনায় একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনা সাপেক্ষে শুধুমাত্র তাঁর থিসিস বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে সহযোগী অধ্যাপক আজাদী পারভীনের সঙ্গে মোবাইলে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।