বন্যার্তদের পাশে রাবির শিক্ষার্থীরা
দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। এখন উত্তরাঞ্চলের বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ফলে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে এলাকগুলোতে।
বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়াতে সাহায্যের বক্স হাতে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দিনরাত অর্থ সংগ্রহের কাজ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ কাজে এগিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতিসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
‘বন্যার্তদের পাশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’ স্লোগানে গান গেয়ে সাহায্য তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। গলায় গিটার, কাহন, ঢোল, দোতারা ঝুলিয়ে আর হাতে ত্রাণ বক্স নিয়ে তাঁরা তুলেছেন প্রায় ৮০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার অসহায় মানুষদের তাঁরা ত্রাণ বিতরণ করেছেন।
উদ্যোগতাদের একজন আবদুল মজিদ অন্তর। তিনি বলেন, ‘সংগীতের মাধ্যমে আমরা মানুষের ভেতরের মানবতাকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি। বন্যার্তদের দুভোর্গের বিষয়টি উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজশাহী শহরের বিভিন্ন স্থানে গান গেয়ে তিন দিনে প্রায় ৮০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছি। গতকাল সোমবার সৈয়দপুরের সাওঁতাল পল্লী, দিনাজপুরের আওলিয়াপুর ও কোমলপুরে বন্যার্তদের মাঝে চিড়া, গুড়, লবণ, স্যালাইন ও ওষুধ বিতরণ করেছি।’
‘ছবি তুলুন বন্যার্তদের সাহায্য করুন’ এ স্লোগান নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমসিজে ফটোগ্রাফি ক্লাবের একদল তরুণ। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে মানুষের ছবি তুলে দিচ্ছেন। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে কিছু অর্থ সংগ্রহ করছেন। যে অর্থ পৌঁছে দেওয়া হবে বানভাসি মানুষের মাঝে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জেলা সমিতি বন্যার্তদের সহায়তায় ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে টাকা উত্তোলন করছে। জানা গেছে, বন্যার্তদের সাহায্যে কুমিল্লা জেলা সমিতি প্রায় দুই লাখ টাকা, নীলফামারী জেলা সমিতি প্রায় ৫০ হাজার, গাইবান্ধা জেলা সমিতি ৩০ হাজার টাকা, টাঙ্গাইল, লালমনিরহাট ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা সমিতি লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছে।
কুমিল্লা জেলা সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বন্যার্তদের জন্য টাকা তুলতে গিয়ে বারবার একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি- ‘কুমিল্লায় তো বন্যা হয়নি, তোমরা কেন টাকা তুলছ?’ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি। বেশির ভাগ টাকা সমিতির সদস্যরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তুলেছেন। কুমিল্লার প্রবাসী, নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের কাছ থেকে অধিকাংশ সাহায্য এসেছে। সমিতির পক্ষ থেকে তোলা ৪২ হাজার টাকাসহ সদস্যদের ব্যক্তিগত সংগ্রহ মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা উত্তোলন করেছি।’
এ ছাড়া রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তিনটি বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাঁদের ক্লাস পার্টির জন্য তোলা পুরো টাকা বন্যার্তদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বন্যার্তদের সাহায্যার্থে করা তহবিলে জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।