মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে ঢাবি ছাত্রলীগ
এক বছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। পেরিয়ে গেছে দুই বছর। কিন্তু নতুন করে কমিটি দেওয়া হয়নি এখনো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটি কবে হবে তাও জানেন না কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা। তবে দ্রুতই সম্মেলন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।
২০১৫ সালের ১৮ জুন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এতে সভাপতি আবিদ আল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মোতাহার হোসেন প্রিন্সের নাম ঘোষণা করা হয়। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় প্রায় আট মাস পর। গঠনতন্ত্রে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির কথা উল্লেখ করা থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পায় ২০১ জনের নাম।
ছাত্রলীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বিষয়ে কোনো উল্লেখ করা নেই। তবে গঠনতন্ত্রের ৬ (জ) ধারায় উল্লেখ আছে, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সাংগঠনিক জেলা হিসেবে গণ্য হবে।’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জেলা শাখার সমতুল্য বলে গণ্য করা হলে এ কমিটির মেয়াদকাল হবে এক বছর। সে হিসেবে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও এক বছর চলছে এ কমিটি।
ছাত্রলীগের মেয়াদকাল ও নতুন কমিটির বিষয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে গঠনতন্ত্রের প্রথম অংশের ১০ (খ) ধারায়। সেখানে উল্লেখ আছে যে, ‘জেলা শাখার কার্যকাল হবে এক বছর। জেলা শাখাকে ওই সময়ের মধ্যে নবনির্বাচিত কর্মকর্তাদের হাতে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদনক্রমে ৯০ দিন সময় বৃদ্ধি করা যাবে। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন না হলে জেলা কমিটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ আহ্বায়ক/অ্যাডহক কমিটি গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন না হলে আহ্বায়ক/অ্যাডহক কমিটি বাতিল বলে গণ্য হবে এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত বছরের ২০১৬ সালের ১৫ জুনেই মেয়াদ শেষ হয়েছে এ কমিটির। মেয়াদ শেষ হলেও কোনো সম্মেলনের আয়োজন করেনি এ কমিটি। কেন্দ্রীয় সংসদও ৯০ দিন সময় বাড়ায়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ কমিটি এখন বিলুপ্ত। তবে নতুন করে সম্মেলনের আয়োজন না করায় এটাকে অবৈধ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদকাল শেষ হবে অচিরেই। তাঁরা এখনো দেশের অনেক জায়গাতে জেলা কমিটি দিতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি কবে শেষ হবে তা নিয়েও তাঁদের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। এ বিষয়ে তারা আমাদের সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনা করেনি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ইউনিট হল কমিটি দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ১৫ জুনে। এসব হল কমিটিতে মেয়েদের হল ছাড়া ছেলেদের অধিকাংশ হলের কমিটি দেওয়া হয়নি এখনো। মেয়াদোত্তীর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির অধীনে থাকা হল কমিটিকেও অবৈধ বলে মনে করছেন অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন কবে হবে তা জানেন না ঢাবি সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কোনো এখতিয়ার নেই। কেন্দ্রীয় কমিটি যেদিন চাইবে সেদিন কমিটি হবে। তবে তাঁরা আমাদের নতুন কমিটি বা সম্মেলনের ব্যাপারে জানাননি।’
সম্মেলনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘আমরা সব জায়গায় কমিটি দিচ্ছি। সে কারণে ঢাবিতে সম্মেলন করতে দেরি হচ্ছে। আমরা দ্রুতই সম্মেলন করে নতুন কমিটি দিয়ে দেব।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনকে একাধিকবার কল দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তাঁর মতামত জানা সম্ভব হয়নি।