বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতার
পবিত্র মাহে রমজান মুসলমানদের জীবনে নিয়ে আসে এক নব বার্তা। রমজানে পাল্টে যায় পুরো জীবনব্যবস্থা। একটি বিষয় খুবই মনোমুগ্ধকর, তা হলো ইফতার আয়োজন। ইফতার আয়োজন ভিন্নতা পায় আয়োজনে, রুচিতে ও অভিজাততন্ত্রে। তবে সবার কাছেই এটি কাঙ্ক্ষিত বিষয়। উত্তরবঙ্গের মানুষের স্বপ্নের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রাণবন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ইফতার আয়োজন থেকে পিছিয়ে নেই। ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও রমজানকে সঠিকভাবে পালন করা শিক্ষার্থীর কাছে এক অনবদ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বছরে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিক নিয়মে ক্যাম্পাসে অবস্থান করলেও রমজান এলে তা যেন পায় এক ভিন্ন মাত্রা। ইফতারকে কেন্দ্র করে পড়ন্ত বিকেলবেলা বেরোবি ক্যাম্পাস যেন হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল মাঠজুড়ে চলে ইফতারের আয়োজন। আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে পুলিশ ফাঁড়িসংলগ্ন মাঠ, শহীদ মিনারের পাদদেশ, স্বাধীনতা স্মারক এবং শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল। ইফতারের পূর্ববর্তী সময়ে ছোট-বড় অনেক দলের ঢল নামে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। কেউ বন্ধু-বান্ধব, কেউ বা ছোট-বড় ভাইবোনদের নিয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মাঠের মধ্যে কাগজ অথবা পেপার বিছিয়ে ইফতারের আয়োজন করে থাকে। মূলত ব্যক্তি, সামষ্টিক উদ্যোগে এসব ইফতারের আয়োজন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক, খেলার মাঠ, শহীদ মিনারের পাদদেশ, শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এবং ক্যাফেটেরিয়া ছাড়াও বিভিন্ন অনুষদ ও নিজ নিজ বিভাগে ঘরোয়াভাবে ইফতার আয়োজন হয়। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী ও সাহিত্য সংগঠন, যেমন—উদীচী, সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, রণন, গুনগুন, বাঁধন ইত্যাদি সংগঠনের উদ্যোগে ক্যাম্পাসে রমজান মাসে ইফতার আয়োজন করা হয়।
এখানে সংগঠনের সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষক, অন্য সংগঠনের সদস্য এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমন্ত্রিত হয়ে থাকেন। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ও ছোট ক্যাম্পাস হওয়ায় তাঁদের মধ্যে সৌহার্দ্য একটু বেশি। আর এসব আয়োজনের ফলে তাঁদের মধ্যকার সম্পর্কটা হয়ে ওঠে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর। দেখা যায়, ইফতারের সময় সবাই ছোলা, বুন্দিয়া, বেগুনি চপ, ডিম চপ, পেঁয়াজু, জিলাপি, আম, আনারস, খেজুর ও পানির বোতল নিয়ে ছোট ছোট দল হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে বসে ইফতারি করছে। আর এসব ছোট দলের বাহারি ইফতারের দৃশ্য দূর থেকে দেখলে সত্যিই মন জুড়ে যায়।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনী-গরিব, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান। ভ্রাতৃত্ববোধ, সাম্য ও বন্ধুত্বে এখানে উচ্ছ্বসিত সবাই। রমজানকে কেন্দ্র করে শুধু মুসলমান শিক্ষার্থীরাই নয়, অন্য সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইফতারে অংশগ্রহণ করে। কিছু ভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুসলমান বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিদিন মাঠে বসে ইফতার করতে করতে এমন হয়ে গেছে যে ওদের সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ইফতার না করলে চলেই না। শিক্ষার্থী কাওছার মাহমুদের মতে, ‘সারা দিন রোজা থেকে সন্ধ্যাবেলা ক্যাম্পাসে বসে সবাই একই পাত্রে ইফতার করার মজাই আলাদা।’ আনন্দের পাশাপাশি তাদের মধ্যে এক প্রকার হতাশাও কাজ করে, কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের জন্য দুটি হল তৈরি হলেও এখনো খুলে দেওয়া হয়নি বিধায় তাঁদের কষ্ট করে মেস থেকে এসে ইফতারে অংশ নিতে হয়। হল চালু হলে সে সমস্যা অনেকাংশেই লাঘব হতো এবং ইফতারের আনন্দ অনেকটা বেড়ে যেত। যা হোক, সাময়িক দুশ্চিন্তা ও বিভেদকে ভোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে এই ইফতার আয়োজন। ফলে নতুন দিনকে গ্রহণ করার প্রাণোচ্ছল হাসি খেলা করে তাঁদের চোখেমুখে।