জাবিতে কাদির মোল্লার নামে স্থাপনা, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লার নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) একটি কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
ভবনটি নির্মাণের প্রতিবাদে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীহল এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি নিয়ে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের সঙ্গে দেখা করতে তাঁর কার্যালয়ে যান।
উপাচার্যকে দেওয়া স্মারকলিপিতে ছয়টি দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- মেহের চত্বর থেকে ছাত্রীদের হল পর্যন্ত কোনো অবকাঠামো নির্মাণ নয়, ক্যাম্পাসে কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিদের নামে স্থাপনার নামকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান ও অবকাঠামো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
এ সময় উপাচার্য এবং সেখানে উপস্থিত প্রশাসনের অন্য ব্যক্তিরা কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। এর একপর্যায়ে কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা আবারও একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তরের দিকে যান। তারা ভিত্তিপ্রস্তরটি ‘বিকৃত’ করে এর নাম দেন ‘থু থু চত্বর’। ভবনটি নির্মাণের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় কোনো ‘ব্যবসায়ী’র নামে স্থাপনা হতে পারে না। এ ছাড়া স্থাপনার জন্য নির্ধারণ করা স্থানটি ছাত্রী হলগুলোর কাছাকাছি। তাই ওই জায়গায় স্থাপনা নির্মাণ হলে ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
এদিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছে।
ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি দীপাঞ্জন সিদ্ধান্ত কাজল বলেন, ‘আবদুল কাদির মোল্লা কে, যে তাঁর নামে ও অর্থায়নে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ তৈরি করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয় বাণিজ্যিকীকরণের জায়গা নয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে না এলে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আব্দুল কাদির মোল্লার নামে কনভেনশন সেন্টার করা অযৌক্তিক। এখানে তিনি টাকা দিয়ে নাম কিনতে চেয়েছেন। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ব্যক্তির নামে কোনো কিছু হতে পারে না।’
তবে কনভেনশন সেন্টার নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আজ বিকেলে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘আবদুল কাদির মোল্লা কনভেনশন সেন্টার’ সম্পর্কে কোনো প্রকার বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আবদুল কাদির মোল্লা কনভেনশন সেন্টার’ নির্মাণের পেছনে বাণিজ্যিক কোনো উদ্দেশ্যে নেই। এটি শিক্ষা-গবেষণা সহায়ক একটি অবকাঠামো হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে দেশি-বিদেশি গবেষকদের অবস্থান ও গবেষণার সুবিধা থাকবে। এ সেন্টারে আন্তর্জাতিকমানের কর্মশালা, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বার্ষিক সম্মেলন ইত্যাদি করার মতো উপযুক্ত সেমিনার হল নির্মাণ করা হবে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শতভাগ সম্পত্তি হিসেবেই থাকবে।
গত ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্থাপনাটি নির্মাণের পুরো টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে ব্যবসায়ী আব্দুল কাদির মোল্লার।
এর আগে আব্দুল কাদির মোল্লা নিজের অর্থে জাবিতে তিনটি বাস দিয়েছেন। বাসগুলোতে ওই ব্যক্তির নামও রয়েছে। তবে সেগুলো নিয়ে আন্দোলন করেনি শিক্ষার্থীরা।