তিন মাসেও কাউকে গ্রেপ্তার করেনি ফিলিপাইন
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে আট কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি যাওয়ার পর তিন মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। ফিলিপাইনের একটি ব্যাংক হয়ে ক্যাসিনোতে চলে যায় ওই অর্থ। এ ব্যাপারে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ফিলিপাইনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকেও (এনবিআই) পুরোপুরি এ ঘটনার তদন্তে যুক্ত করা হয়নি। এ ঘটনায় দেশটির সিনেট যে শুনানি শুরু করেছিল, তাও গত সপ্তাহে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
ফিলিপাইনে ওই অর্থের যাত্রাপথ অনুসরণ করে এই চুরির ঘটনার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন কয়েকজন কর্মকর্তা ও বেসরকারি সংস্থার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কিন্তু তাঁরা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ঠান্ডা হয়ে গেছে। এই চুরির হোতাদের ফিলিপাইন সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা রয়েছে এবং তাঁরা দেশটির মুদ্রাপাচার আইনের দুর্বলতার খুঁটিনাটি জানে। এ কারণেই তাঁরা ফিলিপাইনকে বেছে নিয়েছে।’
ম্যানিলাভিত্তিক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গোয়েন্দা অগাস্টাস ‘এইস’ এসমেরালদা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা বিশ্বের অন্যতম বড় সাইবার চুরির ঘটনা। এটিকে ব্যাংক হ্যাক করার মতো সাধারণ কোনো ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না।’ অগাস্টাস দুটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের হয়ে কাজ করছেন।
অগাস্টাস বলেন, ‘এখানে কেউ টাকা চুরির জন্য একজন হ্যাকার ভাড়া করেন। সেই ব্যক্তি ব্যাংকগুলো, মুদ্রাপাচারবিরোধী ব্যবস্থা এবং ক্যাসিনো সম্পর্কে জানে।’
এ সময় লাস ভেগাসের ক্যাসিনোতে ডাকাতির কাহিনী নিয়ে নির্মিত হলিউড সিনেমা ‘ওশানস ইলেভেনের’ উদ্ধৃতি দিয়ে এসমেরালদা বলেন, “বাংলাদেশে ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা আধুনিক যুগের ওশানস ইলেভেন। এটিকে আমি ‘ম্যানিলা টুয়েলভ’ বলব।”
এসমেরালদা জানান, দুটি আন্তর্জাতিক ব্যাংকের গ্রাহকদের পক্ষে তিনি এই মামলাটি দেখছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইনের ক্যাসিনো যাওয়ার প্রধান কারণ হলো, ক্যাসিনোগুলো দেশটির মুদ্রাপাচার প্রতিরোধ আইনের আওতায় পড়ে না। অর্থাৎ অর্থের সন্দেহজনক উৎস সম্পর্কে সরকারকে তথ্য দিতে বাধ্য নয় জুয়ারিরা।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ‘গেইমিং ইন্ডাস্ট্রিজ’ বিস্তারের সুযোগ দিতেই ২০১৩ সালে ফিলিপাইনের কংগ্রেস ক্যাসিনোকে ওই আইনের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। এ ছাড়া ফিলিপাইনের পুরোনো ব্যাংক সিক্রেসি আইন তদন্তকারীদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের কঠোরতম ওই আইনের কারণে প্রায় সব ধরনের বিদেশি মুদ্রার অ্যাকাউন্ট ও লেনদেনের তথ্য গোপনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ঢোকা আট কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের মধ্যে এক কোটি ৭০ লাখ ডলারের এখনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ফিলিপাইনের সিনেট ব্যাংক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এই লেনদেনে জড়িত অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
হ্যাকাররা গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার হ্যাক করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে ভুয়া সুইফট মেসেজ পাঠায়। ৩৫টি মেসেজের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রায় ১০০ কোটি ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে তারা।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা) চুরি হয়। এর মধ্যে চারটি মেসেজের মাধ্যমে আট কোটি ১০ লাখ ডলার চলে যায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংক করপোরেশনের (আরসিবিসি) এক শাখায়। ওই ব্যাংক থেকে একটি রেমিটেন্স এজেন্সির হাত ঘুরে ওই অর্থের বেশির ভাগ চলে যায় ক্যাসিনোতে। বাকি অর্থ যায় শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা থেকে অর্থ উদ্ধারের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ।