এক চুলা ৬০০, দুই চুলা ৬৫০
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারে টিসিবি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রাহকপর্যায়ে গ্যাসের দাম ২৬ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং বিদ্যুতের দাম ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
এতে এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৬০০ টাকা এবং দুই চুলা ব্যবহারকারীদের ৬৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে। এখন এক চুলা ব্যবহারকারীদের ৪০০ টাকা এবং দুই চুলা ব্যবহারকারীদের ৪৫০ টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
তবে সেচ ও ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বাড়তি মূল্য দিতে হবে না।
এছাড়া মূল্য বেড়েছে সিএনজিও। প্রতি ঘনফুট সিএনজি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়েছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়ছে।
গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারি এ সিদ্ধান্তের কথা বিইআরসিকে জানানো হয়।
২০১৪ সালের নভেম্বরে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড সঞ্চালন ট্যারিফ বাড়ানোর আবেদন করে। একই মাসে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের বাড়ানোর আবেদন করে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে আবেদনে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহকৃত গ্যাসের উপর গড়ে ৪০ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২, ৩, ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি গণশুনানি হয়। সবার যুক্তি ও মতামতের উপর ভিত্তি করে এ দাম নির্ধারণ করা হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান বিইআরসি চেয়ারম্যান এ আর খান।
বিশ্বে জ্বালানির দাম কমলেও দেশের বাজারে এর দাম বাড়ানোর কারণ সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের মতো এত কম দামে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গ্যাস বিক্রয় হয় না।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জ্বালানির চাহিদা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কমে আসা, গ্যাসের উপর নির্ভরতা কমানো, ভবিষ্যত জ্বালানির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয়ের সমন্বয়ের বিষয় বিবেচনা করেই এ দাম নির্ধারণ করা হয়েছে হয়েছে বলেও বিইআরসির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আসন্ন পে-স্কেল বাস্তবায়ন, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, আয় বৃদ্ধি ও বর্তমান সরকারের মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নসহ সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
গ্যাসের দাম
নতুন দাম অনুযায়ী গ্যাসের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগের দাম অর্থাৎ ২ টাকা ৮২ পয়সাই বলবৎ থাকবে। ক্যাপটিভ পাওয়ারের আগের দাম ৪ টাকা ১৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৮ টাকা ৩৬ পয়সা করা হয়েছে।
শিল্পের ক্ষেত্রে প্রতিঘন মিটার গ্যাসের দাম ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা, চা বাগানে ৫ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৪৫ পয়সা, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৯ টাকা ৪৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৩৬ পয়সা করা হয়েছে।
সিএনজি গ্যাস
সিএনজি গ্যাসের প্রতিঘন মিটারের বর্তমান দাম ৩০ টাকা থেকে ৩৫ করা হয়েছে।
গৃহস্থালির ক্ষেত্রে
গৃহস্থালিতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে আগে প্রতিঘন মিটার গ্যাসের জন্য ব্যয় হতো ৫ টাকা ১৬ পয়সা আর নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী এখন ৭ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
গ্যাসের এক চুলার ক্ষেত্রে (প্রতিমাসে নির্দিষ্ট) ৪০০ টাকার পরিবর্তে এখন ৬০০ টাকা। আর দুই চুলার (প্রতিমাসে নির্দিষ্ট) ক্ষেত্রে পূর্বের ৪৫০ টাকার পরিবর্তে ৬৫০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
অপরদিকে ২০১৪ সালের আগস্টে বিদ্যুতের দাম ১৭ দশমিক ৪৫ থেকে ২৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানোর জন্য সরবরাহকারী সব প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গণশুনানি হয়। তার ভিত্তিতেই বর্তমান বাড়তি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবহৃত পরিমাণের উপর কার্যকর হবে।
বিদ্যুতের দাম
বাসাবাড়িতে ব্যবহারে গ্রাহকদের সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যবহারের পরিমাণের ওপর দাম নির্ধারিত হবে। প্রতিমাসে ব্যবহৃত ১-৫০ ইউনিট পর্যন্ত দাম অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ ৩ টাকা ৩৩ পয়সা। ১-৭৫ ইউনিট ৩ টাকা ৫৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৮০ পয়সা, ৭৬-২০০ ইউনিটের দাম ৫ টাকা এক পয়সা থেকে ৫ টাকা ১৪ পয়সা, ২০১-৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫ টাকা ১৯ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৩৬ পয়সা, ৩০১-৪০০ ইউনিট ৫ টাকা ৪২ পয়সা থেকে ৫ টাকা ৬৩ পয়সা, ৪০১-৬০০ ইউনিট ৮ টাকা ৫১ পয়সা থেকে ৮ টাকা ৭০ পয়সা এবং ৬০১ ইউনিটের অধিক ব্যবহারকারীর ইউনিট প্রতি ব্যয় হবে ৯ টাকা ৯০ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৯৮ পয়সা।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এনার্জি রেগুলেটরী কমিশনের সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, মো. মাকসুদুল হক, রহমান মোর্শেদ, সচিব হাবিবুর রহমান।