অভিবাসী বাড়লেও কমছে রেমিটেন্স
বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসীর সংখ্যা বাড়লেও উদ্বেগজনক হারে রেমিটেন্স (প্রবাসী আয়) কমেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট (রামরু)। রেমিটেন্স কমার পেছনে বৈশ্বিক কিছু কারণ ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পরিবর্তন ও হুন্ডির কথা জানিয়েছে গবেষণা সংস্থাটি।
বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন ইতিহাসে ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক লোক অভিবাসন করার সুযোগ পেয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা নয় লাখ ৩১ হাজার ৮১২ জন। এসব বাংলাদেশি কর্মী উপসাগরীয় ও অন্যান্য আরব দেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছে। গত বছরের চেয়ে যা ৩৪ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
অভিবাসনের ক্ষেত্রে সাফল্য হলেও হতাশার খবর হলো, অভিবাসীদের পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স গত বছরের চেয়ে কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, দুই বছর আগের চেয়ে এবার রেমিটেন্স কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ।
রামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের অভিবাসী বাড়ার ফলেও কিন্তু রেমিটেন্স বাড়ছে না। সেটা গত নভেম্বর পর্যন্ত। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত আমাদের রেমিটেন্স এসেছে ১২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন। একবার ’৯৬-৯৭-এর দিকে একবার রেমিটেন্স কমে ছিল।’
বাংলাদেশ থেকে শ্রম অভিবাসনের এ বছরের গতি-প্রকৃতি বিষয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে রেমিটেন্স কমার কারণ হিসেবে রামরুর পক্ষ থেকে বৈশ্বিক কিছু কারণের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরের কয়েকটি কারণ তুলে ধরা হয়।
রামরু চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘তবে এবার কমাটা শুধু বৈশ্বিক কারণ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এবারের কারণটা ব্যাখ্যা করার পেছনে আমরা কতগুলো কারণ এনেছি। ইসলামী ব্যাংকে যেভাবে পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে খুব দ্রুত। একধরনের শোনা যায়, এক টাইপের ক্যু হয়েছে সেখানে। সম্পূর্ণ বদলে ফেলা হয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এই পরিবর্তনটা জামায়াত বা ইত্যাদি কারণে প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এইটার ইমপ্যাক্ট (প্রভাব) রেমিটেন্সের ওপর কী পড়বে তা ভাবা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে এটার একটা অন্য রকম প্রসেসের মাধ্যমে পরিবর্তনটার যাওয়া উচিত ছিল। রেমিটেন্স মার্কেট যাতে এফেক্টেড না হয়। এবং সেখানে আমরা প্রমাণ তো দিয়েই দিয়েছি। ১৯ পারসেন্টে নেমে এসেছে তাদের শেয়ার। যেখানে ৩০ পারসেন্টের ওপর সব সময় থাকত তাদের শেয়ার। হায়েস্ট রেমিটেন্স তারাই আনত।
এছাড়া অভিবাসন প্রক্রিয়ার ব্যাপক অনিয়ম, শ্রম গ্রহণকারী দেশগুলোর সংস্কার, শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে রামরুর পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের কার্যক্রমের সমালোচনা করে সংস্থাটি।
বামরুর চেয়ারপারসন ড. তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘অভিবাসীদের হয়তো দাবি করার সময় এসেছে, তাহলে সাড়ে তিন হাজার টাকা আমি কেন দিতে যাব। আমি কেন এই সাড়ে তিন হাজার টাকা দিয়ে তোমার প্রবাসী ব্যাংকের কিছু লোকের চাকরির বেতন দিব। তোমার বিদেশে বাজার খোরার বেতন আমি কেন দিব। লেবারের ক্যাশের কারো কারো বেতন কেন আমি দিব। কেন আমি লেবারবিহীন লোকের বেতন আমি দিব। আমি কি, আমি ওখানে যাচ্ছি সেবা পাওয়া আমার অধিকার। আমার যে অধিকার সেইখানে তুমি এই টাকা খরচ কর।’
সংস্থার পক্ষ থেকে আরো জানানো হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও দেশের ১৯টি জেলায় মানুষের দেশে ও বিদেশে অভিবাসন হার এ বছর বেড়েছে।