‘১৮০ দিনের বিধান পালন করেননি বিচারকরা’
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও তা সঠিকভাবে বিচারক, সরকারি আইনজীবী (পিপি) বা তদন্ত কর্মকর্তারা পালন করতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার চট্টগ্রামের একজন গৃহবধূ হত্যা মামলার শুনানিকালে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত আজ থেকেই এ আইনের ৩১ (ক) ধারার নির্দেশনা পালনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালত এ সময় বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ সালে তৈরি করা হয়েছে। অথচ গত ১৬ বছরেও এ আইনের ৩১ (ক) ধারা অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তির বিধান পালন করেননি বিচারক, পিপি ও তদন্ত কর্মকর্তারা।’
আইনের ৩১ (ক) ধারায় নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি বিধানের কথা বলা হয়েছে। যদি ওই বিধান প্রতিপালন করা না হয়, তাহলে কেন ওই সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি হলো না- তার ব্যাখ্যা দেওয়ার বিধান রয়েছে আইনে।
কিন্তু বিচারক, পিপি ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ১৬ বছরেও এই ধরনের কোনো ব্যাখ্যা সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের কাছে দাখিল করেননি।
স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মিলাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়। ঘটনার দিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন। ওই বছরের শেষের দিকে মামলাটি চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারের জন্য যায়। চলতি বছরের ২১ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
অভিযোগ গঠনের পর সাত মাসেও কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনানুযায়ী, মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে আসামি জামিন চাইতে পারেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই, মিলাদ হোসেনের জামিন চেয়ে আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী কুমার দেবলু দে।
গত ১ নভেম্বর ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। এরপরই আদালত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মামলা ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান প্রতিপালন করা হয়েছে কি না, তা প্রতিবেদন আকারে অবহিত করতে সরকারকে নির্দেশ দেন।
ওই নির্দেশের পর আজ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয় হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে হাইকোর্ট এ ধরনের আদেশ দেয়। একই সঙ্গে মিলাদ হোসেনে নামের ব্যক্তিকে জামিন না দিয়ে তাঁর মামলাটি ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।