কাঁচাবাজার থেকে কারাগারে, কিশোর থেকে যুবক বিনা বিচারে
প্রায় ১৪ বছর আগের কথা। ২০০২ সালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারের একটি দোকানে কাজ করতেন ১৫ বছরের কিশোর বেলাল ওরফে ইসমাইল।
একদিন সন্ধ্যায় বাজার এলাকা থেকে বেলালকে ধরে নিয়ে যায় তেজগাঁও থানার পুলিশ। এরপর কয়েকদিন তাঁকে আটকে রাখে। পরে একটি হত্যা মামলায় আদালতে উপস্থাপন করে। সেই থেকে কারাগারে আটক রয়েছেন তিনি। কারণ মামলাটির কোনো নিষ্পত্তি হয়নি। এর মধ্যে রিমান্ডে নিয়ে প্রচুর মারধরও করেছে পুলিশ। কিন্তু যে হত্যা সম্পর্কে কিছুই জানেন না, সে সম্পর্কে কী তথ্য দেবেন তিনি?
কেমন ছিল ১৪ বছরের কারাজীবন? জানতে চাইলে এনটিভি অনলাইনকে বেলাল বলেন, দীর্ঘ বন্দীজীবনে খোঁজ নেয়নি পরিবারের কেউ। ফলে খাওয়া-গোসল-চিকিৎসা কিছুই পাননি তিনি। কারণ হিসেবে বললেন, কারারক্ষীরা সেখানে টাকা ছাড়া খাওয়াও দেয় না। টাকা হলেই কারাগারে সব পাওয়া যায়। শুধু কি তাই? যেদিন আদালতে হাজির করা হতো, সেদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত থাকতে হতো অভুক্ত। সকালে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া এবং দিনশেষে আবার কারাগারে ফিরে আসার সময়টুকুতে কোনো খাবার দেওয়া হতো না।
বেলালরা ছিলেন পাঁচ ভাই। এর মধ্যে তিনজনই মারা গেছেন। তাই অভাবের তাড়নায় মাত্র ১৫ বছর বয়সে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আনন্দ শাহ এলাকার গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছিলেন কাজ করতে। তখনো জানতেন না এই ঢাকায় আসাই কাল হবে তাঁর জীবনে। দীর্ঘ সময় কারাবাসের পর আজ যখন হাইকোর্টের নির্দেশে জামিন পেলেন, তখন জানেন না পরিবারের সদস্যরা আর কেউ বেঁচে আছেন কি না। কিংবা থাকলেও কোথায় বা কেমন আছেন।
সম্প্রতি বেলালসহ বিনা বিচারে কারাগারে আটক চার বন্দির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে। এ খবর আদালতের নজরে এলে হাইকোর্ট তাঁদের আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ওই চারজনকে বিনা বিচারে দেড় যুগ আটক রাখা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
আজ রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই চারজনের মধ্যে তিনজনকে জামিন দেন। অন্যজনকে জামিন না দিলেও ৬০ দিনের মধ্যে তাঁর মামলা নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জামিন পাওয়া তিনজনের একজন হলেন বেলাল ওরফে ইসমাইল। তাঁর মামলা আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।