মাদারীপুরের ২০০ বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট বন্ধে রিট
মাদারীপুরে ২০০ বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে পুকুর পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। আগামীকাল সোমবার হাইকোর্টের অবকাশকালীন দ্বৈত বেঞ্চে রিট আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে বলে জানান তিনি।
রিটে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মেয়র মো. খালেদ হোসেন ইয়াদ, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও মাদারীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিবাদী করা হয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে ‘জেলা প্রশাসনের পুকুর ভরাট করছে যুবলীগ-ছাত্রলীগ’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিট দায়ের করা হয়।
আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০০ বছরের পুরাতন পুকুর ভরাট-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর জনস্বার্থে রিট দায়ের করেছি।’ তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সরকার পরিবেশ সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু সরকারের মন্ত্রীর নির্দেশে পুকুর ভরাট করে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। সংবিধানের ২৭, ৩১, ৩২ ও ৪২(১) অনুচ্ছেদে রয়েছে জনগণের সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকারের লোক সম্পত্তি রক্ষার বদলে ধ্বংস করছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন
যুবলীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা অবৈধভাবে পুকুরটি ভরাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভা থেকে পুকুরটি ভরাট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
মাদারীপুর পৌরসভা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, শহরের পুরান বাজারের লঞ্চঘাট এলাকায় পুকুরটি অবস্থিত। পুকুরটি ভরাট প্রক্রিয়ার সঙ্গে রয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে ও মাদারীপুর সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুর রহমান রুবেল খান, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভির মাহমুদ।
৪ অক্টোবর সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন নেতা সেখানে অবস্থান করছেন। পুকুরে একটি পাইপ দিয়ে বালু ফেলা হচ্ছে।
ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘মাদারীপুর শহর রক্ষা বাঁধের কাছাকাছি যত পুকুর আছে, সব ভরাট করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক অবহিত আছেন। তাঁদের অনুমতি নিয়েই আমরা ভরাট কাজ শুরু করেছি।’
সাইফুর রহমান রুবেল খানের দাবি, পুকুর ভরাট করে সরকারের উন্নয়নকাজ করা হবে। নৌপরিবহনমন্ত্রী মাদারীপুরের উন্নয়ন করার জন্য পুকুর ভরাট করার নির্দেশ দিয়েছেন।
পৌর মেয়র ও স্থানীয়রা জানান, মাদারীপুর শহরে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ি পুকুর নামে পরিচিত দুই একর তিন শতক আয়তনের ওই পুকুরটির মালিক জেলা প্রশাসন।
আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনের সভাপতি রেজাউল হক রিজন ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রীর নির্দেশে পুকুরটি ভরাট হচ্ছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন সব জেনেও রহস্যজনকভাবে নীরব রয়েছে। আর আন্দোলনকারীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে।
পৌর মেয়র খালিদ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের ইচ্ছাকৃত অসহযোগিতার কারণে আমি পুকুরটি রক্ষায় ভূমিকা নিতে পারছি না। জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ মদদে প্রভাবশালী চক্র সরকারি সম্পত্তি দখল করছে।’
এ ছাড়া ৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দুপুরেও তিনটি সংগঠন বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছে। এত কিছুর পরও জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হয়নি।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠন ফ্রেন্ডস অব নেচারের নির্বাহী পরিচালক রাজন মাহমুদ জানান, জেলা প্রশাসক যদি মনে করেন, কারো চাপে বা ভয়ে ভরাট বন্ধ করতে পারছে না। তাহলে উচিত তাকে বদলি হয়ে অন্য জেলায় চলে যাওয়া।
বারবার চিঠি দিয়েও পুকুর ভরাট বন্ধ না হওয়ায় জেলা প্রশাসকের রহস্যজনক ভূমিকা বলে দাবি করে মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক খালিদ হোসেন ইয়াদ জানান, জেলা প্রশাসক জঘন্যতম কাজ করেছে। সংবিধান মতে, সরকারি সম্পত্তি রক্ষার জন্য তাঁর যে নৈতিক দায়িত্ব, তা অনিশ্চয়তা মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এ ধরনের লোক দায়িত্বে থাকলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। এ সময় তিনি জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন।