বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী নেতাকে ধরে পুলিশে দিল ছাত্রলীগ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়কে ধরে পুলিশে দিয়েছে ছাত্রলীগ। সংগঠনের নেতাকর্মীরা দিলীপ রায়ের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিও জানিয়েছেন। এই দাবি মানা না হলে ক্যাম্পাস অচল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তাঁরা।
আজ রোববার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আম চত্বর থেকে দিলীপ রায়কে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাবি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দিলীপ রায়কে আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে।’
বিকেলের দিকে ওসি হুমায়ুন কবির জানান, দিলীপ রায়ের বিরুদ্ধে রাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বাদী হয়ে একটি মানহানির মামলা করেছেন। ওই মামলায় দিলীপকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে গতকাল গণভবনে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হবে পৃথিবীর সর্বাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ফলে এতে সুন্দরবনের পরিবেশ-প্রতিবেশ ও মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না। বরং এই প্রকল্প থেকে বছরে ৩০ কোটি টাকা সিএসআর আসবে, যা এলাকার মানুষের উন্নয়নের জন্য ব্যয় হবে।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আন্দোলনের পেছনে অন্য ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়েছেন।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পেজে দুটি স্ট্যাটাস দেন দিলীপ। ওই দুটি স্ট্যাটাসের নিচে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই দুটি স্ট্যাটাস দিয়ে দিলীপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন।
এ ব্যাপারে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর রাবি শাখার সভাপতি প্রদীপ মার্ডি বলেন, ‘আমরা পুলিশকে বলি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতি কিংবা কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া দিলীপকে ধরে নিয়ে যেতে পারবেন না। তখন পুলিশ বলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো দরকার নেই। একপর্যায়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে দিলীপকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।’
প্রদীপ মার্ডি আরো বলেন, ‘দিলীপ তার ফেসবুক স্টেটাসে এমন কিছু বলেনি, কিংবা এমন কোনো ভাষা ব্যবহার করেনি যার জন্য তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে। গণতান্ত্রিক দেশে কোনো একটা বিষয়ে যে কেউ তার মত প্রকাশ করতে পারে। আর দিলীপ তাই করেছে।’
এদিকে দুপুর ১টার দিকে দিলীপ রায়ের ছাত্রত্ব বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে রাবি শাখা ছাত্রলীগ।
সমাবেশে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খালিদ হাসান বিপ্লব বলেন, ‘দিলীপ রায় বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেছে। তাই আমরা তাকে ধরে পুলিশ প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছি। তার মানে এই নয়, আমাদের দায়িত্ব শেষ। আমরা দিলীপ রায়ের ছাত্রত্ব এবং হলের সিট বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের এ দাবি না মানা হলে প্রয়োজনে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেব।’
সাতদিনের আলটিমেটাম দিয়ে রাবি ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাঞ্জু বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করা দিলীপ রায়ের ছাত্রত্ব সাতদিনের মধ্যে বাতিল করা না হলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি দেব। আজ যদি দিলীপ রায়ের শাস্তি না হয়, আরো অনেকে এ রকম কাজে উৎসাহিত হবে।’