নৌযান ধর্মঘট চতুর্থ দিনে, ভোগান্তি
বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে সারা দেশে চতুর্থ দিনের মতো নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে।
আজ শুক্রবার দেশের নৌবন্দরগুলো থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়নি। এর ফলে বিভিন্ন বন্দরে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে।
ধর্মঘটে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জাহাজ মালিকরা।
নৌযান শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ পুনর্নির্ধারণ, নৌপথে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৫ দফা দাবিতে গত ২২ আগস্ট মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় নৌশ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ। এতে সমর্থন দিয়েছে ১৭টি নৌশ্রমিক সংগঠনের মোর্চা বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার যাত্রাবাহী ও পণ্যবাহী লঞ্চ, কোস্টার, বার্জসহ অন্যান্য নৌযানে প্রায় দুই লাখ শ্রমিক কাজ করে।
আশুগঞ্জ নৌবন্দর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ থেকে প্রতিনিধি মো. আক্তারুজ্জামান রঞ্জন জানান, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশ করে বাল্কহেড, তেলবাহী ট্যাংকার, লাইটার জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এ কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য নিয়ে আসা শতাধিক কার্গো জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আটকা পড়েছে। তবে আশুগঞ্জের সঙ্গে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ছয়টি নৌ-রুটের পাঁচ জেলা সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৪ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বন্ধ রয়েছে পণ্য ওঠা-নামার কাজ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক এ কে এম হাবিবুল্লাহ বাহার জানান, নৌযান শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে গত এপ্রিল মাসে নৌমন্ত্রী, শ্রম মন্ত্রণালয়, মালিক ও নৌযান শ্রমিক প্রতিনিধিদের এক সভায় শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গত চার মাসে বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর না হওয়ায় ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে।
পূবাঞ্চলীয় কার্গো মালিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. নাজমুল হোসাইন হামদু জানান, ধর্মঘটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত জরুরি কাঁচামাল নিয়ে জাহাজ আটকা পড়ায় মালামাল পরিবহনে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘তবে আশুগঞ্জে জাহাজ বন্ধ থাকলে প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকা আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীর্ঘদিন জাহাজশিল্পে ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে এ শিল্পে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা পরবর্তী সময়ে আমাদের অর্থনীতির জন্য অশনিসংকেত। এ ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
মোংলা বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস বন্ধ
মোংলা থেকে প্রতিনিধি আবু হোসাইন সুমন জানান, মোংলা বন্দরে অবস্থানরত দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহনকাজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। নৌযান ধর্মঘটের কারণে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করতে না পারায় এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বন্দরের শিল্প-কলকারখানাগুলোতে। ধর্মঘটের ফলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছেন আমদানি-রপ্তানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।