ঢাবি প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ছাত্র ইউনিয়নের
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বর্ষবরণে নারীর যৌন হয়রানির প্রতিবাদ ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আজ শনিবার দুপুরে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্য পাঠকালে ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে মিথ্যা হিসেবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। জড়িতদের বাঁচাতে প্রক্টর, পুলিশ, ভিসি যখন একই সরলরৈখিক অবস্থান নেয়, তখন লজ্জিত ও সংক্ষুব্ধ হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকে না। ঘটনা ঘটার সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।’
প্রক্টর মিথ্যাচার করছেন উল্লেখ করে হাসান তারেক বলেন, “গত কয়েক দিনে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রক্টর বারংবার মিথ্যাচার করেছেন। গত ১৬ এপ্রিল একাত্তর সংযোগে তিনি বলেন, ‘লিটন নন্দী ছাড়া আর কোনো প্রত্যক্ষদর্শী নেই’ এবং ‘সিসিটিভিতেও প্রমাণ নেই’। এরই মধ্যে তাঁর বক্তব্য মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, যার প্রমাণ একাত্তর টিভির ভিডিও ফুটেজ।”
প্রক্টর ড. এম আমজাদ আলীর সমালোচনা করে হাসান তারেক বলেন, ‘প্রক্টর আরো বলেছেন, দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পাসের মধ্য দিয়ে কোনো গাড়ি চলেনি। অথচ এমন মিথ্যাচারের সাক্ষী সেদিনের হাজার হাজার জনতা।’
‘দায়িত্ব পালনে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ-মিথ্যাচারী প্রক্টরের অপসারণ চাই’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এমন মিথ্যাচারী মানুষ জাতির বিবেকখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মানুষ গড়ার প্রতিষ্ঠানে প্রক্টর হিসেবে তো নয়ই, শিক্ষক হিসেবেও থাকার নৈতিক অধিকার রাখেন না।’
ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সমালোচনা করে হাসান তারেক বলেন, ‘সাব্বির সজীব নামে ঢাবির একজন ছাত্র ঘটনাস্থল থেকে অনেকগুলো ছবি তুলেছিল। সে জানিয়েছে, ভিসি স্যারের নির্দেশে সে ছবিগুলো শেয়ার করতে পারছে না। কার স্বার্থে ভিসি স্যার ছবিগুলো প্রকাশে বাধা দিচ্ছেন? তবে কি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিরাও এ ঘটনায় জড়িত?’
পুলিশেরও সমালোচনা করেন হাসান তারেক। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন সংগঠনের নেতাকর্মীরা কয়েকজন নিপীড়ককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করলেও পরক্ষণেই পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। পুলিশের ভাষ্যানুযায়ী, সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নাকি তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। একাত্তর টিভি পুলিশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়েই দেখিয়েছে সেদিন কী কী ঘটেছিল। তবে আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই, একই ফুটেজ একাত্তর টিভি পেল, পুলিশ কেন পেল না?’
সংবাদ সম্মেলনে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণার কথা আবার উল্লেখ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। কর্মসূচিগুলো হলো ১৯ এপ্রিল সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংহতি সমাবেশ, ২০ এপ্রিল বেলা ১১টায় অপরাজেয় বাংলা থেকে কার্জন হল পর্যন্ত মানববন্ধন এবং ২১ এপ্রিল বেলা ১১টায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি পেশ।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি কয়েকটি দাবিও তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ-মিথ্যাচারী প্রক্টরকে অপসারণ করতে হবে, সংঘটিত যৌন নিপীড়নকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে, কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্বে ধারাবাহিক অবহেলার তদন্ত ও বিচার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যকর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে হাইকোর্ট নির্দেশিত যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে ও বাসস্থান-শিক্ষাঙ্গন-কর্মস্থল ও গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে জাতীয়ভাবে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
মধুর ক্যান্টিনের সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মারুফ বিল্লাহ তন্ময়, ঢাবি সংসদের সভাপতি লিটন নন্দী, ঢাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাস, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সুমন সেন গুপ্ত, ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিক রায় প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।