ভিডিও কনফারেন্সে জঙ্গি ও দুর্ধর্ষ অপরাধীদের আদালতে হাজিরা
কারাবন্দি জঙ্গি এবং ভয়ঙ্কর অপরাধীদের আদালতে নেওয়ার পরিবর্তে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাজিরা নিশ্চিত ও জিজ্ঞাসাবাদের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১৯৪ একর জায়গার ওপর স্থাপিত দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় কারাগারে বন্দী স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরুর পর আজ শুক্রবার বিকেলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন এই তথ্য জানিয়েছেন। শুক্রবার নিজ দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কারা মহাপরিদর্শক জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আজ বিকাল পর্যন্ত পাঁচ হাজার এর অধিক বন্দি স্থানান্তর করা হয়েছে। আজ বিকেলের মধ্যে সকল বন্দি স্থানান্তর সম্ভব বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তিনি।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, ‘ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কারাবন্দিদের আদালতে হাজিরা দেওয়ার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শিগগিরই শুরু হবে। যারা দুর্ধর্ষ আসামি তারাই শুধু এই প্রক্রিয়ায় হাজিরা দিতে পারবেন।’
কারাসূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ২৩ ফেব্রুয়ারি দুই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে তিন দুর্ধর্ষ জঙ্গিকে ছিনতাই করে নেওয়া হয়। ভয়ানক ওই ঘটনার কিছু দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই মধ্যে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে সবুজসংকেতও মিলেছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারাবন্দিদের ভিডিও কনফারেন্স পদ্ধতি চালু করতে হলে সিআরপিসিতে (কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর বা ফৌজদারি কার্যবিধি) একটি ছোট সংশোধনী আনতে হবে। আসামিকে সশরীরে হাজির হওয়ার বাধ্যবাধকতার জায়গায় বিকল্প হিসেবে ভিডিও কনফারেন্সের সুযোগ রাখার বিধানটি সংযোজন করতে হবে।
সূত্রমতে, স্পর্শকাতর মামলায় গ্রেপ্তার কারাবন্দি ভয়ঙ্কর অপরাধীদের নিয়মিত আদালতে হাজিরার ক্ষেত্রে রীতিমতো কর্মযজ্ঞের দরকার হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, প্রটোকল জটিলতা, সর্বোপরি যানবাহনের জ্বালানি খরচ কমাতে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রস্তাবকে তাই বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার।
আবার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা আদালতে নেওয়ার পর দুর্নীতিগ্রস্ত পুলিশ সদস্যদের ‘ম্যানেজ’ করে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেন। তাঁরা এভাবে অপরাধজগতে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন। কারাবন্দি থেকেও সংঘটন করছেন একের পর এক ভয়ঙ্কর অপরাধ।
আবার অনেক সময় আদালতপাড়া থেকেই আসামি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। স্বরাষ্ট্র থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে বেটিংয়ের জন্য পাঠানো ওই প্রস্তাবে ভিডিও কনফারেন্সের নানা সুবিধার বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জবানবন্দি নিতে এ-সংক্রান্ত বিধান করা হলে আসামিপক্ষের আইনজীবী কারাবন্দির কক্ষে বসেই আইনি লড়াইয়ে অংশ নিতে পারবেন। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে শুনানির নিয়ম চালু হলে কারাবন্দিরা অসুস্থ থাকলেও তাদের জবানবন্দি নিতে সমস্যা হবে না।
সূত্র জানায়, দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে তা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
এদিকে নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তর প্রসঙ্গে কারাপ্রধান জানান, আজ সকাল সাড়ে ৬টা থেকে এই বন্দি স্থানান্তর শুরু হয়েছিল, বিকেল ৪টার মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি বন্দি স্থানান্তর করা সম্ভব হয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে যে, সন্ধ্যার মধ্যে ছয় হাজার ৪০০ বন্দির সবাইকেই স্থানান্তর করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে, সকাল বেলা আগত কারাবন্দিদের কে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়ছে। এই বন্দিদের মধ্যে সবাই ছিল পুরুষ। নবনির্মিত এই কারাগারে নারীদের সেল না থাকায় তাদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও মানবতাবিরোধী মামলার আসামিদেরও কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বন্দি স্থানান্তর প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে আজ বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার শেখ মারুফ হাসান জানায়, বন্দি স্থানান্তর করার জন্য ভোর থেকেই কারাগারের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত রাস্তায় ২০০ গজ পরপর পুলিশ, র্যাব, বিজিবি মোতায়েন করা ছিল।
উল্লেখ্য, রাজধানীর পাশেই কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৪ একর জায়গায় চার শতাধিক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার আধুনিক এবং সর্ববৃহৎ এই কারাগার।