পাবনা জেলা পরিষদের উদ্যোগে সহস্রাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন
পাবনা জেলা পরিষদের উদ্যোগে গত পাঁচ বছরে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সহস্রাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে জেলার নয়টি উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে।
রাজশাহী বিভাগের মধ্যে পরপর কয়েকবার শ্রেষ্ঠ জেলা পরিষদ নির্বাচিত হয়েছে পাবনা। সম্প্রতি দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সচিব আবদুল মালেকের উপস্থিতিকে এক সভায় পাবনা জেলা পরিষদের ফরিদপুর ডাকবাংলোর উন্নয়ন চিত্রসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রশংসিত হয়। ফলে জেলা পরিষদের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য আবার ফিরিয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, সেবার ব্রত নিয়ে ১৪৩ বছর আগে গড়ে ওঠা জেলা পরিষদ আবার মানুষের কাছে দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে, অসহায়, দুস্থ ও গরিব মানুষকে সেবা দিতে জেলা পরিষদ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। যুগের পরিবর্তনে এ ব্যবস্থা মানুষ হারিয়ে যেতে বসেছিল। বর্তমান সরকার দেশের ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ করায় মানুষজন হারানো সুযোগ-সুবিধা আবার ফিরে পাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাবনা জেলা পরিষদে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সহস্রাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে এক হাজার আসনবিশিষ্ট পাবনার বনমালী ইনস্টিটিউট কমপ্লেক্স নির্মাণ। এর ফলে এই অঞ্চলের সংস্কৃতিকর্মীরা নতুন উদ্যমে তাঁদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারছেন। এ ছাড়া ভাঙ্গুড়া, সাঁথিয়া ও সুজানগর উপজেলায় ৫০০ আসনবিশিষ্ট মিলনায়তন করা হয়েছে। যা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সাড়ে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে।
ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪৬টি প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয়েছে। ফলে ধর্ম সম্পর্কে সরকারের উদার মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে বলে এলাকাবাসী মনে করছে। ফরিদপুর ও চাটমোহর উপজেলায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি আধুনিক ডাকবাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা-সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে শহীদ এম মনসুর আলী গেট, পাবনা-কুষ্টিয়া মহাসড়কে শহীদ বগা মিয়া গেট এবং পাবনা-নাটোর মহাসড়কে শহীদ আমজাদ হোসেন গেট নির্মাণ করা হয়েছে। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়া উপজেলায় শহীদ আবদুল খালেক স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
৫৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪৪টি ভৌত অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি যাত্রীছাউনি, ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি কালভার্ট, ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০টি কম্পিউটার দেওয়া হয়েছে। ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে দরিদ্র নারীদের ৮৫০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু পরিষদের পাঁচটি কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মধ্যে ৪৬০টি সেলাই মেশিন বিতরণ এবং তিন হাজার মেধাবী ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ৬০ লাখ ৫০ হাজার টাকার বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে তিন হাজার যুব মহিলা ও যুবকদের মধ্যে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, সেলাই, ব্লক, বাটিক, শো-পিস, হস্তশিল্প, নকশিকাঁথা, খাদ্য, পুষ্টি ও রান্না প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা পরিষদ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অংশ হিসেবে পাবনা জেলা পরিষদ এবং এডওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজকে সাত লাখ টাকা ব্যয়ে ওয়াইফাই জোনের আওতায় আনা হয়েছে। ফলে এডওয়ার্ড কলেজের ২৮ হাজার ছাত্রছাত্রী ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে।
পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম বেনজামিন রিয়াজি বলেন, জেলা পরিষদে মানুষজন আগের চেয়ে বেশি বেশি সেবা পাচ্ছে। বিগত সময়ে পাবনা জেলা পরিষদের মাধ্যমে যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, তা বিগত কয়েক দশকেও হয়নি।
পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু বলেন, আগে মানুষজন জানত না যে জেলা পরিষদ নামে সরকারের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ায় সাধারণ মানুষজন এখন হাতে হাতে সুফল পাচ্ছে। এতে সরকার ও জনসাধারণের মধ্যে সেতুবন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ অধিকতর সেবা পাচ্ছে।