‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে আদালতে যাবেন খালেদা জিয়া’
পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে আগামীকাল বুধবার সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যাবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আজ মঙ্গলবার দুপুরে হাইকোর্টে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।
খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, বর্তমান বিচারিক আদালতের ওপরে তাঁরা অনাস্থা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আবেদনও জমা দিয়েছেন তাঁরা। বিষয়টি এখন উচ্চ আদালতে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে। তাই যে আদালতের প্রতি তাঁরা অনাস্থা দিয়েছেন, সে আদালতে আইনগতভাবে বা নৈতিকভাবে শুনানি হতে পারে না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এখনো হাতে পাইনি আমি। যদি আদালতে হাজির হতে হয়, আত্মসমর্পণ করতে হয়, তবে খালেদা জিয়া অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু আপনারা (সাংবাদিক) জানেন, তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা প্রতিদিন তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয় ঘেরাও করে রাখছে। এমনকি বর্তমান সরকারের একজন ক্ষমতাসীন মন্ত্রীর নেতৃত্বেও তাঁর বাড়ি ঘেরাও করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে তিনি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন।’
‘আমাদের মনে হচ্ছে, তাঁকে (খালেদা জিয়া) জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য, উনি যদি রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে একবার বের হন, তখন তাঁকে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। এসব বিবেচনা করে ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে এবং সরকার এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাবে না, উনি যদি জামিন পান তাঁকে আবার তাঁর নিজ কার্যালয়ে ফেরত আসতে দেওয়া হবে, উনি তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন, তাহলে উনি অবশ্যই আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজির হবেন। কিন্তু ওনার নিরাপত্তাজনিত ব্যাপারটায় উনি নিজেও শঙ্কিত, আইনজীবী হিসেবে আমরাও শঙ্কিত। আপনারা জানেন, আইনজীবী হিসেবে তাঁর সঙ্গে আমরা দেখা করতে পারতেছি না।’ বলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন।
প্রবীণ এই আইনজীবী মনে করেন, ‘আমাদের দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর দিন দিন মানুষের আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিচারব্যবস্থায় বিভ্রাট দেখা দিচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এর আগে সবশেষ গত ডিসেম্বরে আদালতে হাজির হয়েছিলেন খালেদা জিয়া, সেদিন তাঁর গাড়িবহরে বোমা হামলা হয়েছিল। এ ছাড়া এখন তাঁর বাড়িতেও তাঁকে প্রায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে তাঁর পক্ষে বাইরে বের হওয়া সম্ভব হবে না।’
এ সময় সাংবাদিকরা জানতে চান, কীভাবে বোঝা যাবে যে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে বা পর্যাপ্ত নিশ্চয়তার ব্যাপারে কী করলে আশ্বস্ত হবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সেটা বোঝা যাবে।’
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে মামলা দুটিতে করা জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার।
রাজধানীর বকশীবাজারে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে স্থাপিত অস্থায়ী এ আদালতে মামলা দুটির বিচার চলছে। এ দুই মামলায় সর্বশেষ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। এ পর্যন্ত ৫৫ কার্যদিবসে সাতবার হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসার অস্থায়ী আদালতে হাজিরা দেন তিনবার। গত বছরের ২৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই শুরু হয়েছিল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ।
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালে জিয়া অরফানেজ ও ২০১১ সালে চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুদক। মামলায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ মোট আসামি নয়জন।