৯৭ ভাগ শিশুকে সরকার স্কুলে রাখতে সক্ষম হয়েছে
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, বর্তমানে শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি শিশু স্কুলে যাচ্ছে। তাদের সবাইকে এখনো ধরে রাখতে না পারলেও ৯৭ ভাগকে ধরে রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে। শিগগিরই এটা শতভাগে উন্নীত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শিক্ষামন্ত্রী এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল, সে সময় শতকরা নয়জন শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেত না। যারা তখন স্কুলে যাচ্ছিল তাদেরও শতকরা ৪৮ জন প্রাথমিকে এবং ৪২ জন নবম শ্রেণির আগেই ঝরে পড়ত।
সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সব শিশুকে বাধ্যতামূলকভাবে স্কুলে পাঠানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই দেওয়া শুরু করে। এতে স্কুলে যাওয়ার হার বৃদ্ধি ও ঝরে পড়ার হার কমতে থাকে বলে মন্তব্য করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।
আজ শুক্রবার রাজধানীর আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে চতুর্থ জাতীয় শিক্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী এসব কথা বলেন। ‘পেশাগত উৎকর্ষ সাধন’ স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশ লিটারেসি অ্যাসোসিয়েশন শিক্ষকদের দুদিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। সম্মেলনটি আয়োজনে অ্যাসোসিয়েশনকে সহযোগিতা করছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন, গণসাক্ষরতা অভিযান ও আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকরা হলেন সমাজ ও দেশের সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি। বর্তমান সরকার শিক্ষকদের বিষয়ে সব সময়ই আন্তরিক। তাঁদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্যই বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।
শিগগিরই এ কমিটি বৈঠকে বসবে এবং তখন এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে শিক্ষকদের আন্দোলনে না গিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকরাই হলেন শিক্ষার নিয়ামক শক্তি। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও নীতি-নৈতিকতায় নতুন প্রজন্মকে আধুনিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার তাঁরাই মূল কারিগর। তাই এই শিক্ষকরা কারো সমান হলেন বা না হলেন, তা কোনো বিবেচিত বিষয় নয়।
অফিসারদের সঙ্গে নিজেদের তুলনা না করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের বলেন, ‘আপনারাই তাঁদের (অফিসার) তৈরি করেছেন। তাই আপনারাই সমাজে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি।’
শিক্ষকদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘শুধু বেতন ও সম্মানের কথা ভাবলেই হবে না, নিজেদের জীবনাচরণ এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা আপনাকে শ্রদ্ধা করে ও আপনার মতো হতে উদ্বুদ্ধ হয়।’
শিক্ষকরা এ জিনিসটি অর্জন করতে পারলে তাঁরাই হবেন দেশের এক নম্বর সম্মানিত ব্যক্তি। এতে কারো দ্বিমত নেই। ভবিষ্যতে বাংলাদেশেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা সবচেয়ে বেশি হবে বলেও সম্মেলনে আশাবাদ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, গ্রামাঞ্চলের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এখন সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছে। এতে শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘এখন সচেতন অনেক পিতা-মাতাই জমি বিক্রি করে হলেও সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। শিক্ষা যে অমূল্য সম্পদ, অভিভাবকদের মাঝে এ সচেতনতা নিয়ে আসার সাফল্য কিন্তু শেখ হাসিনার সরকারেরই প্রাপ্য।’ যোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী।
মাধ্যমিক স্কুলে ছেলে ও মেয়েদের ধরে রাখার ক্ষেত্রে সরকার সমতা আনতে সক্ষম হয়েছে, কোথাও কোথাও মেয়েরা এগিয়েও আছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, দু-তিন বছরের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকেও এ সমতা ফিরে আসবে। উচ্চশিক্ষার হার বৃদ্ধিতে সরকার ডিগ্রি লেভেলে বৃত্তি চালু করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, নারীশিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের কর্মস্থানের ব্যবস্থাও সরকার করেছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ ভাগ, শহরের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৪০ ভাগ ও গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৩০ ভাগ নারী শিক্ষক থাকা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার।
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার চার হাজারের অধিক শিক্ষককে বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এনেছে। দেশেও ১০ লক্ষাধিক শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বার্তা সংস্থা বাসস জানায়, অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এবং আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম এম সফিউল্লাহ।
অনুষ্ঠানে ‘একুশ শতকের শিক্ষক’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ। সম্মেলনের কার্যক্রম উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এম এহছানুর রহমান। স্বাগত বক্তৃতা দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যপক নুরুল ইসলাম।