সদর উপজেলায় দেড় বছরে ৫১৪ বাল্যবিবাহ
সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বাল্যবিবাহ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবণতা প্রতিরোধে দরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। ‘১৮-এর নিচে মেয়েসন্তানের বিয়ে নয়’ লক্ষ্যকে সামনে রেখে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত করার লক্ষ্যে আজ শনিবার সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত অংশীজন সংলাপে এসব কথা তুলে ধরা হয়।
সংলাপের উপস্থাপক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আবদুল সাদী এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় বাল্যবিবাহ মহামারীর আকার ধারণ করেছে। এক পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, গত দেড় বছরে এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ৫১৪টি বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হয়। এর মধ্যে ইসলাম ধর্মমতে ৪২৩টি এবং হিন্দু ধর্মমতে ৯১টি বিয়ে হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বাল্যবিবাহ হয়েছে উল্লেখ করে ইউএনও বলেন, এই সংখ্যা ৯৭। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলীপুর ইউনিয়ন। সেখানে ৬৪টি বাল্যবিবাহ হয়েছে। এ ছাড়া ভোমরা ইউনিয়নে ৪৯, ঘোনায় ৪৭, ধুলিহরে ৪৪, ব্রহ্মরাজপুর ও ঝাউডাঙ্গায় ৩৩টি করে, আগরদাঁড়িতে ২৯, ফিংড়িতে ২৫, কুশখালীতে ২৪, বৈকারী ও বল্লী ইউনিয়নে ১৮টি করে, লাবসায় ১৭, শিবপুরে ৯ ও বাঁশদহ ইউনিয়নে সাতটি বাল্যবিবাহ সংঘটিত হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৫-এর জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৪৯টি বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব হয়েছে। আইন লঙ্ঘন করে বাল্যবিবাহের আয়োজকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অজান্তে আরো বিয়ে সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।
বাল্যবিবাহের কুফল ব্যাখ্যা করে সংলাপে বলা হয়, অপরিণত বয়সে মা হওয়া শিশুরা পুষ্টিহীন ও রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তাদের সন্তানও হয়ে পড়ে রোগাক্লিষ্ট। তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। স্বাস্থ্যহানির কারণে বাল্যবধূ অনেকভাবে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়। এতে তার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অন্ধকার। এসব কারণে পারিবারিক সহিংসতা, যৌতুক নিয়ে বিরোধ, হত্যা, আত্মহত্যাসহ নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। একই সঙ্গে বহু বিবাহের প্রবণতাও বেড়ে যায়। শিশু বয়সে বিয়ে হওয়ায় স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে অনেককে হতে হয় পাচারের শিকার। তারা জড়িয়ে পড়ে নানা অসামাজিক কাজেও। তাদের সন্তানরাও হয়ে পড়ে অভিভাবকহীন পথশিশু। একটি আলোকিত সমাজ গঠনে এ অবস্থা থেকে সরে আসতে হবে।
১৮ বছরের আগে কোনো মেয়ের বিয়েতে সম্মতি দেওয়া চলবে না উল্লেখ করে সংলাপে বলা হয়, এ ব্যাপারে অভিভাবক, শিক্ষক, সমাজপতি সবার দায়িত্ব রয়েছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও ব্যাপক প্রচার চালিয়ে বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে। এ জন্য ইমাম, পুরোহিত, কাজী সবাইকে সচেতন হতে হবে। এই প্রবণতারোধে পরিবার, গ্রাম, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও পরে উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে হবে।
বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত হয় এই সংলাপ। সংলাপে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করা হয়।
সংলাপে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান কোহিনূর ইসলাম, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাংবাদিক কল্যাণ ব্যানার্জি, হাফিজুর রহমান মাসুম, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, অসীম চক্রবর্তী, বেলাল হোসেন, বরুণ ব্যানার্জি, ফারুক মাহবুবুর রহমান, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।