অন্য আসামির যুক্তিতর্কেও থাকতে হবে খালেদা জিয়াকে
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে খালেদা জিয়ার পক্ষে তাঁর আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এই যুক্তিতর্ক শেষ করেন।
এরপর আদালতে শুরু হয় এই মামলার অন্য আসামিদের যুক্তিতর্ক।
এদিকে নিজের যুক্তিতর্ক শেষ হলেও এখন থেকে মামলার প্রতিটি নির্ধারিত তারিখে এবং অন্য আসামিদের যুক্তিতর্ক চলাকালে রাজধানীর বকশী বাজার আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত বিশেষ আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে খালেদা জিয়াকেও।
আজ খালেদা জিয়ার পক্ষে দুটি আবেদন দাখিল করা হয়। একটি হলো তাঁকে স্থায়ী জামিন দেওয়ার জন্য এবং অন্যটি হলো, তাঁর পক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে যাওয়ায় অন্য আসামিদের যুক্তিতর্ক চলাকালে আগামী তিন কার্যদিবস যেন খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির না হতে হয়।
তবে দুটি আবেদনই নামঞ্জুর করেন বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। ফলে অন্য আসামিদের যুক্তিতর্কের সময়ও খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত থাকতে হবে। এ ছাড়া স্থায়ী জামিন না হওয়ার কারণে মামলার প্রতিটি তারিখেই আদালতে হাজির হতে হবে বিএনপির প্রধানকে।
এর আগে আজ বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে খালেদা জিয়ার আইনজীবী মওদুদ আহমেদ বক্তব্য শুরু করেন। তিনি আদালতে তিনটি বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত, এই মামলা দুটি জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এ মামলা খারিজ করা উচিত ছিল।’
‘দ্বিতীয়ত, মামলা দাখিলের আগে সাধারণত কোনো ব্যক্তির অভিযোগ থাকে। কিন্তু এই মামলায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তৃতীয়ত, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে রাষ্ট্রপতির প্যাডে এই মামলাটি তৈরি করে। অথচ রাষ্ট্রপতির প্যাডের মামলার অনুমোদনের বিষয়টি ১৯৯১ সালেই বাতিল হয়ে গেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের বিধিমালা মোতাবেক এই মামলা দায়ের করা হয়নি।’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে মওদুদ আহমেদ বিভিন্ন আইনের যুক্তি তুলে ধরেন।
এই তিনটি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘এই মামলায় খালেদা জিয়াকে সম্মানের সহিত খালাস দেবেন বলে আমি আশা করি। কারণ এই মামলার আইনি কোনো ভিত্তি নেই।’
মামলার কার্যক্রমকে ক্যামেরা ট্রায়ালের সঙ্গে তুলনা করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, ‘এখানে আইনজীবীদের জন্য কোনো বসার ব্যবস্থা নেই, এখানে নির্যাতন মূলক বিচার হচ্ছে বলে আমি মনে করি। কারণ এখানে অনেক আইনজীবী আসতে পারেন না, সাধারণ মানুষও আসতে পারে না। এরপরও এখানে খালেদা জিয়ার আরো ১৪টি মামলা স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা হাইকোর্ট এবং আপিল বিভাগে যখন মামলা পরিচালনা করি তখন বিচারক এবং আইনজীবীদের দূরত্ব থাকে আট ফিট। কিন্তু এখানে দূরত্ব ১০০ ফিটেরও বেশি। আপনাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এতটা দূরত্ব রাখা হয়েছে যা কোনোভাবেই ঠিক নয়। মামলার শুনানিরও ভালো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।’
সবশেষে আদালতকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন,’ এতদ্বারা আপনি এই মর্মে উপসংহারে আসবেন যে সম্মানের সহিত খালেদা জিয়াকে খালাস দেবেন।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত এক কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ।
এ মামলার অপর আসামিরা হলেন—খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।