‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওষুধ বিতরণ করেন আকায়েদ’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাস টার্মিনালে বোমা হামলাকারী আকায়েদ উল্লাহ কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়েছিলেন এবং ওষুধ বিতরণ করেছেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।
‘এই নিষ্পাপ শিশুটি দুদিন হলো তার বাবার মুখ দেখে না। আর কোনো দিন বাবার মুখ সে দেখতে পারবে কি না তাও জানা নেই।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আকায়েদ উল্লাহর শাশুড়ি মাহফুজা আক্তার।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জিগাতলার বাসায় এসব কথা বলেন মাহফুজা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাস টার্মিনালে বোমা বিস্ফোরণের সময় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আকায়েদ। ইউএনবির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
মাহফুজা আক্তার আরো বলেন, আকায়েদ তাঁর নামের সঙ্গে মিল রেখে নিজের ছয় মাস বয়সী ছেলের নাম রেখেছেন ওবায়েদ উল্লাহ আজম। আকায়েদ প্রতিদিনই স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে ভিডিওকলে কথা বলতেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, অন্য বাচ্চাদের মতোই ওবায়েদ বেড়ে উঠুক।’
আকায়েদের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউস জুঁই এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারা দিন কান্নাকাটি করছেন বলে জানানো হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে এসে বিয়ে করেন আকায়েদ। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। চলতি বছর ১০ জুন সন্তানের জন্ম দেন জুঁই। সন্তানকে দেখতে গত ২২ সেপ্টেম্বর আকায়েদ বাংলাদেশে এসেছিলেন। এরপর তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রে ২২ অক্টোবর চলে যান।
মাহফুজা আক্তার বলেন, বাংলাদেশে এসে আকায়েদ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান। সেখানে রোহিঙ্গাদের মাঝে ওষুধ বিতরণ করেন। রাতে হোটেলে না থেকে সেই অর্থ আকায়েদ রোহিঙ্গাদের সাহায্যে খরচ করেছেন বলেও জানান তিনি। রাতে ভিডিও কল করে স্ত্রী ও সন্তানের সঙ্গে কথা বলেন আকায়েদ।
আকায়েদের শ্বশুর জুলফিকার হায়দার জানান, আকায়েদ অত্যন্ত ভদ্র, নম্র স্বভাবের ছিল। মেয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো একজনকেই আমরা বাছাই করেছিলাম। তিনি বলেন, ‘আকায়েদ মসজিদের গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করত। বাংলাদেশে থাকতে কোনো ধরনের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কথা আমরা জানি না। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর কী হয়েছে সেই ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।’
আকায়েদের শ্যালক হাসান মাহমুদ জয় জানান, তাঁর বোন জুঁই ঢাকা সিটি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। জুঁই জসিমউদ্দিনের একটি বই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করেছিলেন। তবে তিনি এর মাত্র দুই পৃষ্ঠা পড়েছেন। হাসান মাহমুদ বলেন, ‘আমার বোনের যদি খারাপ কোনো উদ্দেশ্য থাকত, তাহলে এই বই কম্পিউটার থেকে মুছে ফেলত। পুলিশকে দেখাত না।’
এর আগে মঙ্গলবার আকায়েদের স্ত্রী, শ্বশুর-শাশুড়িকে রাজধানীর জিগাতলার বাসা থেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ ব্যাপারে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসির) প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আকায়েদ বাংলাদেশে থাকার সময় তাঁর সম্পর্কে পুলিশের কাছে কোনো ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই। তাই ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হয়তো আমেরিকায় গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন।’